শাটডাউন অব্যাহত থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে আগামী কয়েক দিনে বিমান চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। যার ফলে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হবে।
এই ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি।
এই সিদ্ধান্ত শুধু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) প্রধান জানান, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারীরা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ক্লান্তির কথা জানানোয় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রায় ১৪ লাখ ফেডারেল কর্মী-যাদের মধ্যে বিমান নিয়ন্ত্রণকারী থেকে শুরু করে পার্ক রেঞ্জার পর্যন্ত রয়েছেন-বেতন ছাড়াই কাজ করছেন অথবা বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছেন, কারণ মার্কিন কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদন করেনি।
আটলান্টা, নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান বিমানবন্দরগুলো এই সেবার হ্রাসে প্রভাবিত হবে।
এক বিবৃতিতে ডাফি বলেন, ‘আমাদের প্রধান কাজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি রাজনীতির বিষয় নয়-এটি তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা। কারণ নিয়ন্ত্রণকারীরা এখনো বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন।’
ইউনিয়নগুলো বলছে, অনেক কর্মী মানসিক চাপের কারণে অসুস্থতায় ভুগছে বা দ্বিতীয় চাকরি নিতে বাধ্য হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাটডাউন চলছে, যার ফলে বাজেট সংকটে সরকারি কাজকর্মে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সরকারি সংস্থা কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত বার্ষিক তহবিলের ওপর নির্ভর করে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন এই সংস্থাগুলো তাদের অনুরোধ জমা দেয়, যা কংগ্রেসকে পাস করতে হয় এবং প্রেসিডেন্টকে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বাজেট আইনে স্বাক্ষর করতে হয়।
গত ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে শাটডাউন তৈরি হয়। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, অনেক জরুরি সেবাও বিঘ্নিত হয়। এবার রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মতবিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত শাটডাউন এড়ানো সম্ভব হয়নি।
‘এটি অস্বাভাবিক,’ বলেন এফএএ প্রধান ব্রায়ান বেডফোর্ড। তিনি বলেন, ‘যেমন শাটডাউন অস্বাভাবিক, যেমন আমাদের নিয়ন্ত্রণকারীরা এক মাস ধরে বেতন না পেয়ে কাজ করছেন-এটাও অস্বাভাবিক।’
ফ্লাইট হ্রাস ধাপে ধাপে কার্যকর হবে-শুক্রবার থেকে চার শতাংশ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কমানো হবে। ১১ নভেম্বর তা ছয় শতাংশে, ১৩ নভেম্বর আট শতাংশে এবং ১৪ নভেম্বর তা পূর্ণ ১০ শতাংশে পৌঁছাবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডাফি এই ঘোষণা দেন এবং প্রভাবিত ৪০টি বিমানবন্দরের একটি আনুষ্ঠানিক তালিকাও প্রকাশ করেন।
যেসব বিমানবন্দরে ফ্লাইট কমানো হচ্ছে, এর প্রায় সবগুলোই ব্যস্ত শহরে অবস্থিত যেখানে যাত্রীদের চাপও বেশি।
এর মধ্যে রয়েছে হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল, নিউ ইয়র্ক জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল, শিকাগো ও'হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এবং লস অ্যাঞ্জেলেস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর।
প্রতিদিন তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ফ্লাইট বাতিল হতে পারে।
মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়বে না।
কম বাজেটের এয়ারলাইন ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইন্স তাদের গ্রাহকদের সতর্ক করে বলেছে, বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে অন্য এয়ারলাইন্স থেকে টিকিট কিনে রাখতে।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সেবা হ্রাসের প্রয়োজন হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএএ।
এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্স, যা উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থা, জানিয়েছে–– তারা এফএএ-এর কাছ থেকে আরও তথ্যের অপেক্ষায় আছে যাতে তারা নির্ধারণ করতে পারে কোন ফ্লাইট বাতিল হবে। তবে তারা আশা করছে, তাদের ‘গ্রাহকদের অধিকাংশ যাত্রা এতে প্রভাবিত হবে না’।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের অধিকাংশ ফ্লাইট নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে এবং সব গ্রাহক বিনা জরিমানায় ফ্লাইট পরিবর্তন, বাতিল বা ফেরত নিতে পারবেন।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত