মহাকাশ বিজ্ঞানের জগতে বর্তমানে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তা হলো ৩আই/অ্যাটলাস। সুদূর আন্তঃনাক্ষত্রিক জগৎ থেকে আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করা এটি তৃতীয় মহাজাগতিক বস্তু। এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে চরম আগ্রহী করে তুলেছে। এর আগমন সৌরজগতের জন্য বিপদজনক না হলেও এটিকে পর্যবেক্ষণ করতে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু করেছেন।
কেন এই তড়িঘড়ি গবেষণা?
এই প্রাচীন ধূমকেতুটিকে এত গুরুত্ব দেওয়ার মূল কারণ হলো এটিকে আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতের বিশেষ চিঠি বা বার্তাবাহক বলেই মনে করা হচ্ছে।ধূমকেতুগুলিকে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগতের গঠনের সময়কার ধ্বংসাবশেষ হিসেবে মনে করা হয়। ৩আই/অ্যাটলাস অন্য একটি নক্ষত্র জগৎ থেকে আসায় এটি ভিন্ন কোনো নক্ষত্রমণ্ডলীর জন্মের সময়কার রাসায়নিক গঠন এবং পরিবেশের তথ্য বহন করছে। এই বিরল সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ জ্যোতির্পদার্থবিদরা।
৩আই/অ্যাটলাস কি?
'আই' দিয়ে 'আন্তঃনাক্ষত্রিক' বোঝানো এই ধূমকেতুটির প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় চলতি বছরের জুলাই মাসে। নাসার অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াইর ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির 'অ্যাস্টারয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম' দূরবীন দল চিলির রিও হুর্তাডো থেকে এটির সন্ধান পায়। এর আগে ২০১৭ সালে ১আই/ওমুয়ামুয়া এবং ২০১৯ সালে ২আই/বোরিসভ নামের আরও দুটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু আমাদের সৌরজগৎ অতিক্রম করেছিল।
ধূমকেতুটি একটি হাইপারবোলিক কক্ষপথ অনুসরণ করছে, যার মানে এটি সূর্যের চারপাশে একটি বদ্ধ পথে ঘুরছে না। ফলে এটি একবার এসে আবার চিরতরে আমাদের সৌরজগৎ ছেড়ে চলে যাবে।
গতিপথ ও অবস্থান
অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটতে থাকা এই মহাজাগতিক পরিব্রাজকটি অক্টোবরের শুরুর দিকে আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলের ২৯ মিলিয়ন কিলোমিটার (১৮ মিলিয়ন মাইল) পাশ দিয়ে চলে যায়। ৩১ অক্টোবর এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে। নাসা জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এটি সূর্যের অপর পাশ থেকে আবার দৃশ্যমান হবে। ডিসেম্বরে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এলেও আমাদের থেকে ২৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার (১৭০ মিলিয়ন মাইল) দূরে থাকবে, যা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়েও বেশি।
কারা কারা পর্যবেক্ষণ করছে?
সূর্যের আড়ালে চলে যাওয়ায় বর্তমানে এটিকে পৃথিবী থেকে ট্র্যাক করা কঠিন হলেও একাধিক মহাকাশযান এবং দূরবীন এর উপর নজর রাখছে। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ইতিমধ্যেই এর পরিষ্কার ছবি তুলেছে। এছাড়াও, সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণকারী পোলারমিটার টু ইউনিফাই দ্য করোনা অ্যান্ড হেলিওস্ফিয়ার মিশন এবং সোলার অ্যান্ড হেলিওস্ফেরিক অবজারভেটরি এটিকে অনুসরণ করছে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির জুপিটারগামী মহাকাশযান জুসও নভেম্বরের মাস জুড়ে এই আগন্তুকের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
এ পর্যন্ত যা জানা গেল
এই বহুমুখী পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে ৩আই/অ্যাটলাস একটি ধূমকেতু। হাবল টেলিস্কোপের চিত্র থেকে দেখা যায়, এর বরফাবৃত নিউক্লিয়াস থেকে ধূলিকণার একটি অশ্রুবিন্দু-আকৃতির আবরণ বেরিয়ে আসছে। এর নিউক্লিয়াস ৪৪০ মিটার (১,৪৪৪ ফুট) থেকে সর্বোচ্চ ৫.৬ কিলোমিটার (৩.৫ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি হলো এর কোমা বা অস্পষ্ট বলয়ের রাসায়নিক উপাদান। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রহ বিজ্ঞানী ড্যারিল সেলিগম্যানের মতে, ৩আই/অ্যাটলাস-এর কোমা মূলত কার্বন ডাই-অক্সাইডে পূর্ণ। এর থেকে বোঝা যায় যে এটি যে নক্ষত্র জগতে তৈরি হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত শীতল। অর্থাৎ এটি তার নক্ষত্র থেকে অনেক দূরে গঠিত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল