আর মাত্র কয়েকদিন পরই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। হকির যে কোনো বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নামবে বাংলাদেশ। জাতীয় নয়, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলই স্বপ্নের বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে। যা ২৮ নভেম্বর ভারতে শুরু হবে। হকির যে কোনো বিশ্বকাপে অভিষেক হবে, এ তো দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ইতিহাস। অথচ এনিয়ে তেমন আলোচনা আছে কি? প্রস্তুতি চলছে, তার পরও সাড়াশব্দ নেই। বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসুক- এনিয়ে হকি ফেডারেশনের তেমন তৎপরতাও নেই। অথচ ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রস্তুতিতে মিডিয়া সরগরম থাকে।
যুবারা বিশ্বকাপে নামার আগে ঢাকাতেই হকির আরেক বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সাবেক বিশ্ব ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলবে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে পাকিস্তান জাতীয় দল ঢাকায় খেলে গেছে অনেকবার। তবে এই প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে তিন ম্যাচ খেলবে। বিশ্বকাপ হকির প্লে-অফ ম্যাচ। যারা জিতবে তারাই বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। এশিয়া কাপে না খেললেও পাকিস্তানকে এ ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন। এনিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। কেননা, পাকিস্তান যেখানে এশিয়া কাপ খেলেইনি। তাদের আবার প্লে-অফে খেলতে দেওয়া হচ্ছে কেন? নিয়ম অনুযায়ী ষষ্ঠ স্থানে থেকে বাংলাদেশের তো সরাসরি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলার কথা।
যতই বির্তক হোক। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তিন ম্যাচ হচ্ছে এটিই সত্য, তাও আবার ঢাকায়, এ তো বড় সুসংবাদ। মূলত এশিয়াকাপ ছাড়া হকিতে তো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলাই হয় না। সেখানে তিন ম্যাচের সিরিজ, তা কি প্রাপ্তি নয়? ঢাকায় এত বড় হকির ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এনিয়ে হইচই লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি? ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে আলোচনা একটাই- ১৮ নভেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচ ঘিরেই। অনেক আগে থেকেই উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার আগে ১৩, ১৪ ও ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তিন ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে। তা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। হকিতে পাকিস্তানের আগের শক্তি নেই তা সত্য। কিন্তু তারা তো চারবার বিশ্ব ও তিনবার অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। এনিয়ে হকি ফেডারেশনের কোনো প্রচার-প্রচারণা আছে কি? শোনা যাচ্ছে, তিন ম্যাচে কোনো টিকিট লাগবে না। অর্থাৎ বিনা পয়সায়
এত বড় ম্যাচ দেখতে পাবেন দর্শকরা। যে ঢিমেতালে অবস্থা তাতে গ্যালারি ভরবে কি না এনিয়েও শঙ্কা রয়েছে।আসা যাক লড়াই প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচ কেমন জমবে? বাংলাদেশের প্রস্তুতিও বা হচ্ছে কেমন। এ ব্যাপারে হকি ফেডারেশন অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘ম্যাচ আয়োজনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কোনো কিছুরই ঘাটতি রাখছি না। জাতীয় দলের প্রস্তুতিও চলছে জোরালোভাবে। আশা করি, লড়াই হবে উপভোগ্য। ম্যাচের রেজাল্ট তো আর আগাম বলা যায় না। দর্শকরা অনেক দিন পর ভালো ম্যাচ দেখতে পারবেন এটাই বলতে পারি।’ সাধারণ সম্পাদক জোরালো প্রস্তুতির কথা বললেও তার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ মামুন উর রশিদ। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ দলটা পাকিস্তান। হতে পারে বিশ্ব হকিতে তাদের আগের অবস্থান নেই। তাই বলে তো খাটো করে দেখার উপায় নেই। হ্যাঁ, প্রস্তুতি চলছে ঠিকই। তাতে আমার মন ভরছে না। মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের টার্গেট বিশ্বকাপ খেলা। তার আগে তারা বাছাই পর্ব নিশ্চিত করতে চাইবে। কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে তা কি জানা নেই। আমার মনে হয় আমরা ধরে নিয়েছি যতই প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন, লাভ নেই। পাকিস্তানকে হারানো যাবে না। এখন খেলার আগেই যদি হেরে বসার মানসিকতা থাকে তাহলে লাভ হলো কী?’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক তারকা খেলোয়াড় কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘আশা করি তিন ম্যাচেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে’। সাবেক তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে এটা হকি ফেডারেশনই ভালো বলতে পারবে। তবে এখানে কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় না থাকাটা আমায় অবাক করেছে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে এত বড় ম্যাচে কোনো প্রচার আছে? হকি ফেডারেশন বরাবরই এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। ছেলেরা খেলবে অর্থ পাবে না। প্রচারও নেই, এ কেমন কথা?’