পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে নিকটজন হলো তার পরিবারের সদস্যরা। সুখে-দুখে এবং বিপদে-আপদে তারাই পাশে থাকে। পরকালীন জীবনেও যেন তারা আপন হয়েই থাকে এবং বিপক্ষে অবস্থান না নেয়, সে জন্য পরিবার নিয়ে ইসলামে বিশেষ এক পরিকল্পনার নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো—পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা এবং তাদের জান্নাতের উপযুক্ত করে তোলা।
এ পরিকল্পনার নির্দেশনা ও তার প্রায়োগিক বিষয় নিম্নরূপ—
পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা : পরিবারপ্রধানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—পরিবারের সব সদস্যকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার পরিকল্পনা করা। তাদের জন্য এমন কর্মপন্থা অবলম্বন করা, যা তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং এমন আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা, যেন তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হয়। আল্লাহর আজাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোনো মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে পরিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে, তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমতো সে শিক্ষা দেওয়াও তার কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদের আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
পারিবারিক পরিকল্পনার গুরুত্ব : পরিবার পরিচালনা শুধু সামাজিক কর্তব্য নয়, বরং এটি একটি ইবাদত; কারণ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবেন। অতএব, পরিবারের প্রতি সচেতন পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীল আচরণ ইসলামী জীবনের মৌলিক অংশ।
পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে নিকটজন হলো তার পরিবারের সদস্যরা। সুখে-দুখে এবং বিপদে-আপদে তারাই পাশে থাকে। পরকালীন জীবনেও যেন তারা আপন হয়েই থাকে এবং বিপক্ষে অবস্থান না নেয়, সে জন্য পরিবার নিয়ে ইসলামে বিশেষ এক পরিকল্পনার নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো—পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা এবং তাদের জান্নাতের উপযুক্ত করে তোলা।
এ পরিকল্পনার নির্দেশনা ও তার প্রায়োগিক বিষয় নিম্নরূপ—
পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা : পরিবারপ্রধানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—পরিবারের সব সদস্যকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার পরিকল্পনা করা। তাদের জন্য এমন কর্মপন্থা অবলম্বন করা, যা তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং এমন আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা, যেন তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হয়। আল্লাহর আজাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোনো মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে পরিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে, তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমতো সে শিক্ষা দেওয়াও তার কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদের আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
পারিবারিক পরিকল্পনার গুরুত্ব : পরিবার পরিচালনা শুধু সামাজিক কর্তব্য নয়, বরং এটি একটি ইবাদত; কারণ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবেন। অতএব, পরিবারের প্রতি সচেতন পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীল আচরণ ইসলামী জীবনের মৌলিক অংশ।
পরিবারে দায়িত্বশীল হতে হলে পরিকল্পনা অপরিহার্য। সন্তানদের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনে লক্ষ্য নির্ধারণ, পারিবারিক আর্থিক স্থিতি বজায় রাখা, দাম্পত্য সম্পর্কের সৌহার্দ্য রক্ষা, সময় ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার—সবই ইসলামী দায়িত্বশীলতার অন্তর্ভুক্ত। পরিবার সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। পুরুষ ও নারী উভয়ের ওপরই পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। পুরুষের দায়িত্ব হলো—স্বামী পরিবারপ্রধান হিসেবে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষাগত ও আর্থিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান করা এবং পরিবারের সবাইকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা।
নারীর দায়িত্ব হলো—স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ ও সন্তানদের যত্ন ও শৃঙ্খলায় নিয়োজিত থাকা এবং গৃহস্থালির সুশৃঙ্খলতা, সন্তানদের আদব-আখলাক ও চরিত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করা। এসব বিষয়ে সচেতন করতে হাদিসে বলা হয়েছে—আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীন লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীন লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ি এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৯৩, ৫১৮৮)
পারিবারিক পরিকল্পনার প্রয়োগ : পরিবারে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য পরিবারে দ্বিনি পরিবেশ সৃষ্টি ও ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করা এবং পারিবারিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠন একান্ত জরুরি। পরিবারিক শিক্ষার প্রভাব মানুষ আজীবন বহন করে এবং তা দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিবার থেকে সুশিক্ষা পেলে ভালো মানুষ হওয়া সহজ হয়। পক্ষান্তরে পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ভালো মানুষ হওয়া কষ্টকর হয়। কাজেই পরিবার অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মানুষের জীবনের বড় অংশ নিজ পরিবারেই অতিবাহিত হয়। মানবজীবনে পরিবারের প্রভাব অপরিসীম। সে ক্ষেত্রে পরিবারে শিক্ষাদীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হলে, পরিবারের সদস্যরা সহজে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। হাদিস থেকে পারিবারিক শিক্ষার প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানই ফিতরাতের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৫; মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৮)
পরিশেষে বলা যায়, পরিবার হলো মানবজীবনের প্রথম ও সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষাকেন্দ্র। এখানেই শিশুর নৈতিকতা, আখলাক ও বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপিত হয়। যে পরিবারে ইসলামী পরিকল্পনা ও দায়িত্ববোধ বিদ্যমান থাকে, সে পরিবারই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। অতএব, পরিবারকে দ্বিনি শিক্ষা, নৈতিক চর্চা ও আখিরাতমুখী চিন্তায় পরিচালনা করা প্রত্যেক মুসলমানের মৌলিক দায়িত্ব।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়