পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর বহু গুণবাচক নাম রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো ‘লতিফ’।
‘লতিফ’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, পরম দয়ালু।
আল্লামা আবদুর রহমান আস-সা’দি (রহ.) বলেন, ‘আল-লতিফ’ সেই সত্তা, যিনি সব গোপন বিষয় অবগত, যিনি বান্দাদের উপকার এমনভাবে পৌঁছে দেন, যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না। তিনি ‘খবীর’ (সবজান্তা) ও ‘রউফ’ (অত্যন্ত সদয়)।
এই নামের মধ্যে যেমন রয়েছে গভীর জ্ঞান, তেমনি রয়েছে সূক্ষ্ম দয়ার প্রকাশ। আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক বান্দার প্রতি অদৃশ্যভাবে দয়াশীল, তিনি তাদের রিজিক, হেদায়েত ও কল্যাণের ব্যবস্থা এমনভাবে করেন, যা তারা কখনো কল্পনাও করে না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু।
তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। আর তিনি মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী। (সুরা : শুরা, আয়াত : ১৯)
এই আয়াতে ইবনে আব্বাস (রা.) ‘লতিফ’ শব্দের অর্থ করেছেন দয়ালু, পক্ষান্তরে মুকাতিল (রহ.) অনুবাদ করেছেন অনুগ্রহকারী। অন্য অর্থ, সূক্ষ্মদর্শী।
মুকাতিল (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা সব বান্দার প্রতিই দয়ালু। এমনকি কাফির ও পাপাচারীর ওপরও দুনিয়ায় তাঁর নিয়ামত বর্ষিত হয়। বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও কৃপা অসংখ্য প্রকার।
আল্লাহ তাআলার রিজিক সমগ্র সৃষ্টির জন্য ব্যাপক। স্থলে ও জলে বসবাসকারী যেসব জন্তু সম্পর্কে কেউ কিছুই জানে না, আল্লাহর রিজিক তাদের কাছেও পৌঁছে।
আয়াতে যাকে ইচ্ছা রিজিক দেন, বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার রিজিক অসংখ্য প্রকার। জীবনধারণের উপযোগী রিজিক সবাই পায়। এরপর বিশেষ প্রকারের রিজিক বণ্টনে তিনি বিভিন্ন স্তর ও মাপ রেখেছেন। কাউকে ধন-সম্পদের রিজিক অধিক দান করেছেন। কাউকে স্বাস্থ্য ও শক্তির, কাউকে জ্ঞান এবং কাউকে অন্যান্য প্রকার রিজিক দিয়েছেন। এভাবে প্রত্যেক মানুষ অপরের মুখাপেক্ষীও থাকে এবং এই মুখাপেক্ষিতাই তাদেরকে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধ করে, যার ওপর মানব সভ্যতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। (কুরতুবি, ফাতহুল কাদির)
কারো কারো মতে, ‘লতিফ’-এর অর্থ হলো গোপনে সাহায্য করা। যেমন—আল্লামা আস-সা’দি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর গুণবাচক নাম লতিফ মানে, তিনি বান্দাকে এমন কল্যাণে পৌঁছে দেন, যা সে কখনো টেরও পায় না। যেমন—তিনি বান্দাকে এমনভাবে হেদায়েত দেন, যা তার চিন্তায়ও আসে না; ফেরেশতারা তার মনে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয়; সমাজভিত্তিক ইবাদত যেমন—জামাতে নামাজ, হজ বা রমজান; এসবের মাধ্যমে তিনি বান্দাদের পারস্পরিক কল্যাণে সংযুক্ত করেন।
আবার কখনো বান্দার জন্য কিছু দুনিয়াবি আকাঙ্ক্ষা সীমিত করেন, কারণ তা হয়তো তাকে গাফেল করে দিতে পারত। এটাও মহান আল্লাহর অপার দয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওপর লড়াইয়ের বিধান দেওয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৬)
এই আয়াতটি মূলত জিহাদের ব্যাপারে হলেও মাঝেমধ্যে আল্লাহ মানুষকে সাময়িক কষ্টে ফেলেন, তাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, তার ঈমানকে দৃঢ় করার জন্য, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংস থেকে বাঁচানোর জন্য—এই সাময়িক কষ্টও মহান আল্লাহ দয়া করেই দেন। যাতে বড় ও স্থায়ী কষ্ট থেকে হেফাজত করা যায়।
আবার কোনো কোনো বান্দাকে মহান আল্লাহ ভালো পরিবারে জন্ম দিয়ে কিংবা নেককার বান্দাদের সংস্পর্শে থাকার সুযোগ দিয়েও দয়া করেন, যা তাকে মানসিকভাবে পরিশুদ্ধ ও ঈমানদার হতে সাহায্য করে। হালাল রিজিক অন্বেষণ ও অল্পে তুষ্ট থাকতে সহযোগিতা করে। এককথায় আমরা প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহর অপার রহমতের ছায়ায় থাকি। তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহর শোকর আদায় করা। নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন