দীর্ঘ ৩৬ বছর ১৬৬ নং খলিলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন শায়েস্তা খাতুন। গত মঙ্গলবার ছিল তার চাকরির শেষ কর্মদিবস। দিনটি উপলক্ষে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, সহকর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। এসময় তাকে সম্মাননা স্মারক, উপহার সামগ্রী ও ফুলেল শুভেচ্ছাসহ আবেগঘন বিদায় জানান গ্রামবাসী। এতে বিদায়বেলা সবার ভালোবাসায় অশ্রুসিক্ত হন বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা শায়েস্তা খাতুন।
মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ১৬৬ নং খলিলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ও মিয়াজানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হকসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, গ্রামের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, প্রায় ৩৬ বছর আগে খলিলাবাদ গ্রামটিতে শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন গ্রামের লোকজন মিলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে শুরু থেকেই নিরলসভাবে পাঠদান দিতেন শায়েস্তা খাতুন। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে তিনি শুধু বিদ্যালয় নয়, গ্রামের মানুষকেও আলোকিত করেছেন। তার আন্তরিকতা, মানবিক মূল্যবোধ পাঠ্যবইয়ের শিক্ষার বাইরে অনেক শিক্ষার্থীকেই আলোকিত করেছে। অনেক শিক্ষার্থী সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত রয়েছেন। তার এই দীর্ঘ কর্মজীবনের শিক্ষা অনেক শিক্ষার্থীর হৃদয়ে রয়ে যাবে।
এসময় পুরো অনুষ্ঠানে সকলের বক্তব্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বক্তারা বিদায়ী প্রধান শিক্ষক শায়েস্তা খাতুনের সুস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে শায়েস্তা খাতুন বলেন, ‘বিদায় অনেক কষ্টের। আমি স্কুলটি থেকে কোনো বিদায় নিতে চাই না। তবে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসীরা আমাকে যেই সম্মান দিয়েছে তাতে আমি আবেগাপ্লুত, মুগ্ধ। সবার কাছ থেকে একজন শিক্ষকের এমন সম্মান পাওয়া সত্যিই গর্বের। শিক্ষকের প্রতি এমন সম্মান সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক। বিদ্যালয়ের যেকোনো প্রয়োজনে আমি পাশে থাকব।’
এসময় অভিভাবকদেরকে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং স্কুলটিতে এসে পড়ালেখার খোঁজ নেওয়ারও আহ্বান জানান শায়েস্তা খাতুন।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৯ সালে খলিলাবাদ গ্রামে শিক্ষা বিস্তারের জন্য খলিলাবাদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামের মানুষ। সেসময় আবুল হোসেনকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এবং আব্দুর রব, রানু বেগম, জোহরা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন চাকরি ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান শায়েস্তা খাতুন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করা হলে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিও সরকারি হয়ে যায়। বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ ৩৬ বছর শিক্ষকতা করেন শায়েস্তা খাতুন। এসময়ে বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে বর্তমানে দেশে বিদেশে কর্মরত রয়েছেন। গ্রামের মানুষের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে এই দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন শায়েস্তা খাতুন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন