সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন গতকাল ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তারা উপজেলা পরিষদ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। একই বিষয় নিয়ে এদিন বাগেরহাটেও সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণদিবস হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-
ফরিদপুর : সম্প্রতি ফরিদপুর-৪ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী এ দুটি ইউনিয়ন কেটে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। এরই প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। দুই দফায় প্রতিবাদকারীরা এ কর্মসূচি পালনের পর গত শনিবার প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাঙ্গা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়া রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় শনিবার রাতে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ৯০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করে। সেই মামলায় পুলিশ রবিবার আটক করে আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আন্দোলনের অন্যতম নেতা ম ম সিদ্দিক মিয়াকে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। অপরদিকে রবিবার আন্দোলন চলাকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, ‘আন্দোলন থেকে সড়ে না গেলে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হবে।’ এ কথায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ভাঙ্গাবাসী।
এর জের ধরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গার বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। এ সময় বিভিন্ন বয়সি নারীদের ঝাড়ু হাতে নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। মিছিলে বৃদ্ধ, কিশোরদের উপস্থিতি ছিল। তারা মহাসড়কে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘বুকের ভিতর দারুন ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ ‘আমার মাটি আমার মা, নগরকান্দায় দেব না।’ বেলা পৌনে ১২টার পর থেকে মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে।
এ সময় অধিকাংশ তরুণের হাতে লাঠি ছিল। কারও কারও হাতে দেশি অস্ত্রও দেখা যায় বলে একাধিক ব্যক্তি জানান। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরা দেখলেই ধাওয়া করছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ভাঙ্গা বাজার বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশের ওপর আন্দোলনকারীরা হামলা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান। তখন দৌড়ে পুলিশ সদস্যরা ভাঙ্গা বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশের মসজিদে আশ্রয় নেন। সেখানেও আন্দোলনকারীরা চড়াও হন। পাশের মাদরাসার শিক্ষকরা দৌড়ে এসে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করেন।
বেলা ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-খুলনা ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক ফের অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ভাঙ্গা গোল চত্বর থেকে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ লোক দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে যান। তারা উপজেলা পরিষদে গিয়ে নির্বাচন কার্যালয়, অফিসার্স ক্লাব, অডিটোরিয়ামসহ বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। পরে তারা সেখানে থাকা দুটি গাড়িসহ আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। তারা ভাঙ্গা থানায় হামলা চালান। তারা এ সময় পুলিশের পাঁচটি পিকআপ, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। একই সময় কয়েক হাজার মানুষ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের পৌরসভার পাশে অবস্থিত হাইওয়ে থানায় হামলা করেন। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। হাইওয়ে থানার ওসি জানান, কয়েক হাজার লোক দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা করে ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং অফিসের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও তছনছ করেন।
 
বাগেরহাট : বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে তৃতীয় দফা আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণদিবস হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা এ হরতাল চলাকালে জেলার ছয়টি মহাসড়কের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার ৪৮টি রুটসহ আন্তজেলায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কভারভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে সড়কের বিভিন্ন স্থানের টায়ার জ্বালিয়ে ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পিকেটিং করেন। ফলে মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসসহ জেলা-উপজেলার সব সরকারি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করেন। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব অফিসে ঢুকতে পারেননি। জেলার সব উপজেলায়ও সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। পূর্ণদিবস হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধে কার্যত মোংলা বন্দর ও বাগেরহাট জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা ইটিজেড, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাট বিসিকসহ জেলার সব শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা আসতে না পারায় কল-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকে। তবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব ও জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দোকানপাট ও রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন চলাচল হরতালমুক্ত থাকায় জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। হরতালে জেলার কোথাও ভাঙচুরসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে আজ মঙ্গল ও কাল বুধবার দুই দিন জেলাব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল প্রত্যাহার করে মঙ্গল ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিস অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে চলমান আন্দোলনের এ সংশোধিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম।
এ সময় তিনি বলেন, বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্য হরতালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব ও জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দোকানপাট ও রিকশা-ভ্যান চলাচল হরতালমুক্ত রাখা হয়। যার কারণে আজকের হরতালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নেই। জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে হবে। বাগেরহাটবাসীর ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মঙ্গল ও বুধবার (১৬-১৭ সেপ্টেম্বর) দুই দিন জেলাব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংশোধিত কর্মসূচিতে এ দুই দিন সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত জেলা-উপজেলা নির্বাচন সব অফিস অবরোধ করা হবে। জেলার ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আরও কঠোর আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        