শাপলা প্রতীকের অনড় দাবির মুখে পিছু হটল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে পুরোনো ১৫টি প্রতীক বাদ দিয়ে শাপলা কলিসহ নতুন ১৯টি প্রতীক যোগ করেছে। এতে ইসির তফসিলভুক্ত নির্বাচনি প্রতীকের সংখ্যা ১১৯টি হলো।
গতকাল সংশোধিত প্রতীকের তফসিলের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য থাকায় ১৫টি বাদ দিয়ে নতুন আরও ১৯টি যোগ করে ১১৯টি প্রতীক তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শাপলা কলি রয়েছে। তিনি বলেন, এটা কারও কোনো দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক নয়। একটি দল শাপলা চেয়েছে। শাপলা ও শাপলা কলির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এটার ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। এখন কোনো দল এভাবে প্রতীক দাবি করলে করতে পারে। সেটা কমিশনের বিবেচনায় নিলে নিতে পারে, সেটা সময়ের ব্যাপার।
নতুন ১৯ ও বাদ পড়া ১৫ প্রতীক : এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতীক তালিকা সংশোধন করে ১১৫টি নির্ধারণ করা হয়। এবার সংশোধিত তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে শাপলা কলি, পাগড়ি, হ্যান্ডশেক, উট, চিরুনি, টর্চলাইট, টেবিল ল্যাম্প, ট্রাক্টর, ড্রেসিং টেবিল, তালা, দোতলা বাস, পানির ট্যাপ, পালকি, ফলের ঝুড়ি, বেবি ট্যাক্সি, বৈদ্যুতিক বাল্ব, মোটরসাইকেল, রেল ইঞ্জিন, সিঁড়ি ও সূর্যমুখী। আগের ১১৫টির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে উটপাখি, কলা, খাট, চার্জার লাইট, টিফিন ক্যারিয়ার, তবলা, তরমুজ, ফুলের টব, ফ্রিজ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, লাউ, শঙ্খ ও সুটকেস।
কলি নয়, শাপলাই চায় এনসিপি : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তালিকায় শাপলা কলি প্রতীক যুক্ত হওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, তারা শাপলা কলি নয়, শাপলা প্রতীক চায়। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের প্রতীক বরাদ্দ সিদ্ধান্তকে প্রতারণামূলক বলে আখ্যা দিয়েছে দলটি। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সেমিনারে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নতুন গেজেটে আমাদের শাপলা কলি প্রতীক দিয়েছে। কমিশন এটি কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেছে, আমাদের বোধগম্য নয়। তবে শাপলা প্রশ্নে আমরা আপসহীন। কমিশনকে শাপলা সম্পৃক্ত করে নতুন গেজেট দিতে হবে। আমরা শান্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। অন্যথায় কমিশন কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে, তা আদায় করে নেব।’
সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘শাপলা চেয়েছি, দিয়েছে কলি। এমন একটা পরিবেশ দাঁড় করানো হচ্ছে, যেখানে আমরা মানসিক চাপে পড়ছি। তোমরা এখনো বাচ্চা-এ মনস্তাত্ত্বিক চাপ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কলি যেহেতু দিয়েছে, শাপলাও দেওয়া সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শাপলা কলি প্রতীক দিয়ে এনসিপির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ প্রতারণামূলক সিদ্ধান্ত থেকে কমিশনকে সরে আসতে হবে।’ এর আগে দুপুরে তালিকায় শাপলা কলি প্রতীক যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।
কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘১৯৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে “নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮”-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করা হলো। উপরিউক্ত বিধিমালার বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপবিধি (১) প্রতিস্থাপিত হবে। এ বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অনুচ্ছেদ ২০-এর দফার অধীন স্থগিত করা প্রতীক ব্যতীত নিম্নবর্ণিত প্রতীকগুলো হইতে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে।’