ব্রাজিলে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের ভয়াবহ অভিযানে অন্তত ১২১ জন নিহত হয়েছেন বলে বুধবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। রিও ডি জেনেরিওর বাসিন্দারা সারারাত ধরে উদ্ধার হওয়া অনেক মৃতদেহ শহরের একটি প্রধান সড়কে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখে বিক্ষোভ করেন।
রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, একটি প্রধান মাদক চক্রকে লক্ষ্য করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানটির নিয়ে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা করা হয় বলে জানায় তারা। উদ্দেশ্য ছিল, সন্দেহভাজনদের একটি বনাঞ্চলে পুলিশের বিশেষ অভিযান ইউনিট অতর্কিত হামলার জন্য অপেক্ষা করছিল।
রিও রাজ্যের নিরাপত্তা প্রধান ভিক্টর সান্তোস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযানে এত বেশি প্রাণহানি কাঙ্ক্ষিত না হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। একই সাথে তিনি যেকোনো পুলিশি দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রিও পুলিশ এ পর্যন্ত চারজন পুলিশ সদস্যসহ ১২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে জনসুরক্ষা কর্মীরা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৩২-এ পৌঁছাতে পারে।
রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা এক্স পোস্টে বলেছেন, মাদক সহিংসতার এই অভিশাপের মোকাবিলা করতেই হবে। তিনি এমন সমন্বিত কাজের আহ্বান জানান, যা পুলিশ ও নিরীহ পরিবারকে ঝুঁকিতে না ফেলে গ্যাংগুলোকে নির্মূল করবে। তিনি বলেন, সংগঠিত অপরাধীরা পরিবার ধ্বংস করবে, বাসিন্দাদের উপর নিপীড়ন চালাবে এবং শহরজুড়ে মাদক ও সহিংসতা ছড়াবে; এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সামরিক ধাঁচের এই অপারেশনের বিপুল হতাহতের তীব্র সমালোচনা করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ব্রাজিলের সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে পুলিশের অত্যন্ত প্রাণঘাতী অভিযানের ধারায় আরও একটি সংযোজন। সংস্থাটি দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
নিহতদের স্বজনরা মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন, যেমন বাঁধা হাত-পা ছুরির আঘাত এবং মুখ-ঘাড়ে গুলির আঘাতের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রিও-এর পেনহা এলাকার বাসিন্দারা সারারাত ধরে বন থেকে বহু মৃতদেহ সংগ্রহ করেন।প্রধান সড়কের মাঝখানে ৭০টিরও বেশি দেহ সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখেন। নিহত সন্তানের মা তাউয়া ব্রিটো কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি শুধু আমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে কবর দিতে চাই।
দুপুরে, পুলিশি সহিংসতার প্রতিবাদে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা গভর্নরের প্রাসাদের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ করে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা লাল হাতের ছাপযুক্ত ব্রাজিলের পতাকা নাড়ান।
রিও'র ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযানটি ছিল ২০২১ সালে। জাকারেজিনহো এলাকায় ২৮ জন নিহত হয়েছিল। আর ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী পুলিশি অভিযানের ঘটনা ছিল ১৯৯২ সালে। বিদ্রোহ দমনে সাও পাওলোর কারানদিরু কারাগারে ১১১ জন কয়েদি মারা যান।
রিও'র গভর্নর ক্লদিও কাস্ত্রো অবশ্য বলেছেন, অভিযানে নিহতরা সবাই বন থেকে গুলি ছোড়া অপরাধী ছিলেন। তিনি এই অভিযানকে মাদক-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে অভিহিত করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযানে তারা রিও-এর বস্তিগুলোতে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী কোমান্ডো ভেরমেলহো গ্যাংয়ের লক্ষ্য করে ১১৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং ১১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল