আধিপত্য বিস্তারে দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি, দখল-বেদখল, মাদক সিন্ডিকেট, খুন-পাল্টা খুনের ঘটনায় খুলনায় ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। গত ৯ মাসে কেএমপিতে ২৬টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছয়টিতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়। জেলার থানাগুলোতে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে খুলনাঞ্চলে বিভিন্ন নদনদী থেকে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যই হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকের শরীরে গুলির চিহ্নও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর ভোররাতে দৌলতপুরে মহেশ্বরপাশায় দুই বাড়িতে মুহুর্মুহু গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
চারটি মোটরসাইকেলে এসে ৭-৮ জন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে। এর আগে ১ অক্টোবর একই এলাকায় ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় তানভীর হোসেন, ৩ আগস্ট মো. আলামিন ও ১১ জুলাই যুবদল নেতা মাহাবুবুর রহমানকে বাড়ি সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৮ জুন রাতে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা রূপসা রাজাপুরে মাদক ব্যবসায়ী সোহাগের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে গোলাগুলির সময় একটি গুলি সাব্বির নামে সন্ত্রাসীর মাথার পেছন দিয়ে ঢুকে চোখ ভেদ করে বেরিয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি গুলির খোসা, তাজা গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করে। নিহত সাব্বির মাদক সিন্ডিকেটের শীর্ষ নেতা ‘গ্রেনেড বাবু’র ঘনিষ্ঠ। এর আগে রূপসায় কালা রনি নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন সাব্বির। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৯ মাসে শতাধিক ঘটনায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাত হলেই শহরে আতঙ্ক ভর করে।
পুলিশের দাবি, ৫ আগস্টের পর বেশকিছু লুট করা অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র খুলনায় ঢুকছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।
কেএমপির তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগরীতে ৩২টি অস্ত্র উদ্ধার হয়। এর মধ্যে তিনটি বিদেশি রিভলভার, ১৪টি বিদেশি পিস্তল, একটি রাইফেল, দুটি কাটা বন্দুক, পাঁচটি পাইপগান, তিনটি ওয়ান শুটার গান উদ্ধার হয়। ৩৪টি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয় ৫৪ জন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (সিটিএসবি) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেকের বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে, যা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য আগে থেকেই এখানে ছিল। তাদের কাছেও অস্ত্র রয়েছে। মিয়ানমার ও ইন্ডিয়া সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বিদেশি পিস্তল, রিভলভার আসছে। তিনি বলেন, অস্ত্রধারীদের ছবিসহ গোপন তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা থানা ও চেকপোস্টগুলোতে দেওয়া হবে। অস্ত্রধারীদের সমূলে উৎপাটনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।