উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা। এ নদী এখন নিয়মিত দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা, ভাঙনে নিঃস্ব হয় মানুষ। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে পরিণত হয় দিগন্তজোড়া বালুচরে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নদীভাঙন, চর গঠন ও শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকটে তিস্তাপারের লাখো মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ১০ দিনে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গড়ে রয়েছে ১৭ হাজার কিউসেক। ভারতের গজলডোবায় ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতিকে রোধ করা হয়েছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে ভারত তুলে নেয় পানি। এতে মরে যাচ্ছে তিস্তা। এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদীর নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে আসন্ন রবি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এখন এ নদীর কোথাও সামান্য পানি আবার কোথাও দিগন্তজোড়া বালু চর। তিস্তা ঘিরেই উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি ও জীবনজীবিকা গড়ে উঠেছিল। একসময় এই নদীর পানির ওপর নির্ভর করে ধান, পাট, ভুট্টা, তিল ও সবজি চাষ হতো। ১৯৮৩ সালে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকেই তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা এখন নিয়মিত দুর্যোগের কারণে পরিণত হয়েছে। পাউবোর তথ্যমতে, গত এক দশকে তিস্তা নদীর ভাঙনে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নদীর তীরঘেঁষে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতিও লালমনিরহাটের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৩৫০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। রাজারহাটে ৪টি গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়, গঙ্গাচড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার ঘর হারিয়েছে এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরে শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। তিস্তা বাঁচাতে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। রংপুর বিভাগজুড়ে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল হয়েছে। সম্প্রতি নদীর ১১৫ কিমি জুড়ে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। ি এ কর্মসূচিতে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এখন সময় এসেছে কথা নয়, কাজ শুরুর। পাউবো প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই পানি কমতে শুরু করে। তারপরও আসন্ন সেচ মৌসুমে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন তা ব্যারাজে রয়েছে। তবে দ্রুত তিস্তা খনন প্রয়োজন।