আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন পুলিশের এসআই মো. আশরাফুল হাসান। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ প্রসিকিউশনের ২০তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। জবানবন্দিতে এই এসআই বলেন, চলতি বছর ১৪ এপ্রিল বেতার বার্তার মাধ্যমে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মেসেজ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি চার্জারসহ ছয়টি রাইফেলের গুলি উদ্ধার করি। প্রতিটি গুলির পেছনে ইংরেজিতে ৭.৬২ ও অন্যান্য লেখা ছিল। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। গতকাল কারাগার থেকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনো পলাতক রয়েছেন। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন আশুলিয়া থানায় কর্মরত এসআই আশরাফুল। শপথ পড়ে জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল দায়িত্বরত ছিলাম। ওই সময় বেতার বার্তার মাধ্যমে আশুলিয়া থানা ভবনের পশ্চিম পাশে মনির ও লতিফ মণ্ডলের পুরোনো টিনশেড বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে গুলি পড়ে রয়েছে বলে জানান আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে একটি চার্জারসহ ছয়টি রাইফেলের গুলি উদ্ধার করি। প্রতিটি গুলির পেছনে ইংরেজিতে ৭.৬২ ও অন্যান্য লেখা ছিল। পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব গুলি জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করি। উপস্থিত তিনজন সাক্ষীসহ আমি নিজেও জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।
তিনি বলেন, জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে কনস্টেবল মো. মামুনুর রশিদ স্বাক্ষর করেন। আলামতগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে এসব আলামত পাঠাই।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
গত ২ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছিলেন আদালত। এ মামলায় ১৭৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এই ছয়জনকে (যার মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।
হাসিনার প্লট দুর্নীতি : পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলেন অন্যতম আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এ মামলায় এই প্রথম কোনো আসামি আত্মসমর্পণ করলেন। বাকি সব আসামি পলাতক।
এদিন এ মামলায় আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে খুরশীদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
৩১ জুলাই এসব মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ গঠন শুনানির সময়ে আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৭; শেখ হাসিনা, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ১৮ এবং শেখ হাসিনা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামির মধ্যে রয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।