‘প্রত্যেক মৃত্যুই আমায় ছোট করে ফেলে, জিজ্ঞেস কর না, ওই দুঃখের ঘণ্টাধ্বনি কার মৃত্যুর বারতা ঘোষণা করছে। তোমার জন্যই বাজছে ওই ধ্বনি।’- মৃত্যুর কিছুদিন আগে শেষ অনুষ্ঠানটিতে লোহানী ভাই এ কথাগুলো বলেছিলেন। জানি না, ওই কথাগুলো বলে তিনি নিজের মৃত্যু বারতাই ঘোষণা করেছিলেন কি না। ১৯৮৫ সালের ৩০ অক্টোবর লোহানী ভাই আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন। দেখতে দেখতে ৪০টি বছর কেটে গেল। তবু বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তিনি নেই।
ফজলে লোহানী একজন সাংবাদিক, মানবতাবাদী, উদার হৃদয়ের বিবেকবান ‘আধুনিক মানুষ’। তিনি শুধু সমাজের উঁচুতলার মানুষই নন, সাধারণ মানুষের কাছেও ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়।
লোহানী ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। লোহানী ভাইকে কাছ থেকে যতই দেখেছি ততই অবাক হয়েছি। মুগ্ধ হয়েছি। গল্পে গল্পে জেনেছি তাঁর প্রবাস জীবনের অনেক ইতিহাস, বিবিসিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা, জেনেছি বিবিসির সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর গল্প। জেনেছি তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের অজানা কথা। কী অসাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষ অথচ কত সাধারণ তাঁর জীবনযাপন। বেশভূষা ও চালচলনে তিনি ছিলেন আধুনিক। চিন্তাধারায় ছিলেন প্রগতিশীল এবং মানবদরদি। কাজকর্মে ছিলেন দুঃসাহসী। জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন প্রাচ্য ও পশ্চিমের মিশ্রণ। সদা হাসিখুশি মানুষ ছিলেন ফজলে লোহানী। কখনো বুদ্ধিজীবীর ভাব ধরে গম্ভীর হয়ে থাকতেন না। প্রায়ই বলতেন, ‘আজকালকার বুদ্ধিজীবীরা কষ্ট করে হাসেন। ভয়-যদি দাঁতের ফাঁক দিয়ে বুদ্ধি স্লিপ করে। আমার এ সমস্যা নেই, তাই প্রাণখুলে হাসতে পারি।’ আপন বিশ্বাস ও জীবনাচরণের মধ্যে কখনো কোনো ফাঁকির প্রশ্রয় দেননি।
এখন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বা টিভিতে প্রচুর কথা শুনি কিন্তু লোহানী ভাই বলতেন কম, করতেন বেশি। সব সময় কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। প্রায়ই বলতেন, ‘জীবনটা খুবই ছোট কিন্তু কাজ অনেক বেশি। তাই সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।’ মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন বলেই আমরা যাঁরা তাঁর বয়োকনিষ্ঠ ছিলাম তাদের সঙ্গেও অনায়াসে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। একসঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমার বন্ধু এবং অভিভাবক। প্রাণখোলা হাসি দিয়ে তিনি যে শুধু বয়সের ব্যবধান দূর করেছেন তা নয়, হাসি দিয়ে অনেক অপরিমেয় দুঃখকেও জয় করেছেন। এতগুলো বিরল বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ের ফলেই ফজলে লোহানী হতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টিভি সুপারস্টার। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর পর সাপ্তাহিক ‘সচিত্র সন্ধানী’র প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছিল, ‘গুডবাই সুপারস্টার ফজলে লোহানী’ (৩ নভেম্বর ১৯৮৫)। সে সময় সুপারস্টার হওয়া এতটা সহজ ছিল না। এখন তো দু-একটি চ্যানেলে মুখ দেখালেই কিছু অতি উৎসাহী পত্রিকার কল্যাণে শুধু সুপারস্টারই নয়, কিংবদন্তি খেতাবও জুটে যায়। শুধু টিভি নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেও অনেকে সেলিব্রেটি হয়েছেন। যে কারণে কিংবদন্তি, লিজেন্ড এসব শব্দ হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বহীন। তখন অবশ্য এত চ্যানেল, এত পত্রিকা, অনলাইন নিউজ ছিল না। সুতরাং পর্দা বা পাতা ভরানোর তাগিদও ছিল না। তাই অপাত্রে এসব শব্দ প্রয়োগ হতো না।
সে সময় টিভির সবচাইতে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’। অনুষ্ঠানটি ছিল সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। লোহানী ভাই প্রায়ই বলতেন, টেলিভিশন বা ছবি যাই বলি না কেন, এখানে দর্শক-শ্রোতার বয়স বা শ্রেণি ভাগ করাটা ঠিক নয়। একটি অনুষ্ঠান বা ছবি সব বয়সের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য হওয়া উচিত। যা পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে পারিবারিক পরিবেশেও দেখা যাবে। কাজটি সবার কাছে প্রিয় হতে পারাটাই সার্থকতা। যা সবাই মিলে দেখা যাবে না সেখানে লেখা থাকে ‘শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’। লোহানী ভাই বেঁচে থাকলে হয়তো এখনকার কিছু কিছু কাজ দেখলে এ কথাটি লিখে দেওয়ার অনুরোধ করতেন।
ইদানীং পরিবার নিয়ে ছবি দেখতে গিয়ে কিছু কিছু ছবির দৃশ্য এবং সংলাপ শুনে অনেক দর্শক বিব্রত হন। মন্তব্য করেন, ছবিটিতে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ কথাটা লেখা উচিত ছিল।
লোহানী ভাই ছিলেন নীরব কর্মী। কখনোই নিজের ঢোল পেটাননি। অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি, যা তাঁর টিমের সদস্যরা ছাড়া কেউ জানত না। যদিও হাল আমলের কিছু ব্যক্তির লেখা টিভির ইতিহাস সম্পর্কিত বইতে, মনগড়াভাবে লোহানী ভাইয়ের টেলিভিশন জীবনের অনেক সাফল্যের কথা সন্তর্পণে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো বইয়ে রয়েছে আত্মপ্রচার। নিজের প্রচার করুক আপত্তি নেই; কিন্তু অন্যের কীর্তি লুকানো বা ভুল তথ্য প্রদান অমার্জনীয় অপরাধ। লোহানী ভাই তাঁর অনুষ্ঠান সম্পর্কে একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি ইচ্ছে করেই অনেক সময় রিস্ক নিই- আমি একবার বাচ্চাদের বই পড়ে দেখলাম তাতে অসংখ্য ভুল। এবং তারা সেই ভুল জিনিসগুলোই শিখছে, একজন গরিব বাবা পয়সা দিয়ে সেই বানান ভুল এবং অসংগতিপূর্ণ বিষয়ে ভর্তি বইগুলো কিনে দিচ্ছেন তার সন্তানকে। এই ভুল শোধরাবার সুযোগ এই শিশুটি আর কখনোই পাবে না। আমি একটি অনুষ্ঠানে বইগুলো ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি, কারণ ডাস্টবিনই এগুলোর উপযুক্ত স্থান।’ লোহানী ভাই বেঁচে থাকলে হয়তো এখন এসব মিথ্যে ইতিহাস ও তথ্যে ভরা বইগুলোর স্থানও হতো ওখানেই।
উল্লেখ্য, আশির দশকে ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই লোহানী ভাই টিভি সাংবাদিকতার সূচনা করেন। বলা যায় বাংলাদেশের টেলিভিশনের রূপ পাল্টে দিয়ে তাকে শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত করার কাজে তিনি ছিলেন সফল পথিকৃৎ। তাঁর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় মুস্তাফা মনোয়ার বলেছেন, ‘টিভি শক্তিশালী মাধ্যম নয়, টিভির অনুষ্ঠান যিনি পরিবেশন করছেন তিনি যদি শক্তিশালী হন, কেবলমাত্র তবেই টিভি শক্তিশালী হয়ে ওঠে’। মুস্তাফা মনোয়ারের এই মূল্যবান উক্তির প্রতিধ্বনি তুলে বলতে হয়- ফজলে লোহানী টিভিতে উপস্থাপনা শক্তির যে মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন তা যেমন শিক্ষণীয় তেমনি অনুকরণীয়। অন্তত আজ যারা টিভি রিপোর্টিং বা টিভি সাংবাদিকতা করছেন, তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, এ দেশে টিভি সাংবাদিকতার জনক ছিলেন ফজলে লোহানী। মুস্তাফা মনোয়ার, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, কামাল লোহানী, শফিক রেহমানসহ তাঁর সমসাময়িক অনেকেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ফজলে লোহানী শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায়, পরের বছর ‘অগত্যা’ নামে তিনি একটি পত্রিকা বের করেন। সে সময় সামাজিক ও সাহিত্য ক্ষেত্রেও সনাতনী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ‘অগত্যা’ ক্ষুরধার ভাষায় লিখে যাচ্ছিল। পাকিস্তান সরকার যখন পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে, তখন পাঠককুল আশ্চর্য হননি। লেখক ও শিক্ষাবিদ মুস্তাফা নূরউল ইসলাম লোহানী ভাইয়ের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রচারিত ইত্যাদির একটি পর্বে লোহানী ভাইয়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, “প্রিন্ট মিডিয়া দিয়ে অর্থাৎ ‘অগত্যা’ পত্রিকা দিয়ে শুরু এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া দিয়ে অবসান অর্থাৎ ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠান দিয়ে তার শেষ এবং সারা জীবন সে সাংবাদিকতাই করে গেছে। এখন স্মৃতিচারণা করতে গেলে একটা কথা মনে হয় ও নিজেই যেন একটা ইনস্টিটিউশনে পরিণত হয়েছিল। ‘অগত্যা’ পত্রিকা নিয়েই আমার বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করে কারণ আমরা একত্র হয়েছিলাম ‘অগত্যা’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই। এবং পরবর্তীকালে যারা খুব বিখ্যাত লেখক হয়েছেন আমাদের যেমন ধরা যাক কবি শামসুর রাহমান, আনিস চৌধুরী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাঈদ আতিকুল্লাহ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আর সর্বকনিষ্ঠ আমাদের মধ্যে হচ্ছে সৈয়দ শামসুল হক। আমাদের প্রত্যেকেরই গোড়ার দিককার লেখা কিন্তু ‘অগত্যা’য়। অর্থাৎ আমরা এক অর্থে ‘অগত্যা’র সন্তান এবং ‘অগত্যা’ এক অর্থে সময়ের সন্তান।”
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেছেন, “তিনি ছিলেন ইংরেজি এবং বাংলা দুটো দিকেই অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষ। যার কারণে তাঁর লেখায় সেই দ্যুতির স্ফুরণ ঘটত। আমার সাংবাদিকতার গুরু হিসেবে তাঁকে মান্য করি। আর সেই সঙ্গে একটি কথা বলে রাখি- সেটা হলো, আজকে এই যে টিভি সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে, এই টিভি সাংবাদিকতার যে পত্তন এটি কিন্তু এই ফজলে লোহানীর হাত দিয়েই।” তবে পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট লেখকদের লেখা আজও বন্ধ হয়নি।
অলস ব্যক্তিদের দেখতে পারতেন না তিনি। সেজন্য সাইকেলে চড়ে নিজেই পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে লোহানী ভাই তাঁর একটি কলামে লিখেছেন, ‘উত্তর ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ ও যুগোস্লাভিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ভ্রমণ করে এক দিন লন্ডন গিয়ে পৌঁছাই। সেদিন আমার পকেটে একটা বিশ পাউন্ডের ড্রাফট ছাড়া আর কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। দিনটি ছিল শনিবার বিকেল। অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধ। ভিক্টোরিয়া স্টেশনের সামনে এক পুলিশের কাছ থেকে ছ’পেনি ধার নিয়ে টিউবে চেপে নিকটস্থ এক ইয়ুথ হোস্টেলে আশ্রয় নিই। ইরানের মরুভূমির মধ্য দিয়ে আমি নিঃসঙ্গ পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রম করেছি। এর আগেই পাকিস্তানে সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম অর্থাভাবে। রুটি আর পানি খেয়ে বহুদিন কেটেছে মরুভূমির মধ্যে। সেসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা আমার জীবনকে দিয়েছে এক নতুন অর্থবোধ।’ আর এই অর্থবোধই হয়তোবা ব্যক্তি ফজলে লোহানীকে দিয়েছে দুঃখী মানুষের সেবা করার একটা বাস্তবমুখী অনুপ্রেরণা।
আজকাল অধিকাংশ অনুষ্ঠানে চলে আত্মপ্রচার আর আত্মপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। অথচ লোহানী ভাই যা করতেন নিজের দায়বোধ থেকে করতেন। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে অনুষ্ঠান করতেন। কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় নয়। সন্দ্বীপের ভূমিহীন সেই বৃদ্ধার কথা অনেকেরই হয়তো মনে আছে। দীর্ঘ ছয় বছর দাপটের সঙ্গে টেলিভিশনকে একটি শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত করলেও তাঁর ভাগ্যে জীবদ্দশাতে তো নয়ই, এমনকি মৃত্যুর পরে, কোনো মরণোত্তর পুরস্কারও জোটেনি।
লোহানী ভাইয়ের মৃত্যুর কথা মনে হলেই মনে পড়ে ছোট মেয়ে রিপাকে। বাবা সামান্য টাকায় চাকরি করতেন। আদুরে কন্যা রিপার হার্টের অসুখে দিশাহারা হয়ে লোহানী ভাইয়ের কাছে আসেন একটুখানি সাহায্যের প্রত্যাশায়। লোহানী ভাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রিপাকে ভর্তি করিয়ে দেন। এখনকার মতো তখন ওপেন হার্ট সার্জারি, এনজিওগ্রাম করা, রিং পরানোর বিষয়গুলো এত সহজসাধ্য ছিল না। প্রতি পদে পদে ছিল মৃত্যুঝুঁকি। লাখ লাখ টিভি দর্শকের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে একসময় রিপার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। বাঁচবার আশা ছিল না যে মেয়েটির, চিকিৎসার পর দিব্যি সুস্থ হয়ে এই রিপাই পরবর্তী আর একটি পর্বে লোহানী ভাইয়ের হাত ধরে হাসপাতালের বাইরে বাগানে নিয়ে আসে। বাগান থেকে ফুল নিয়ে রিপা তার প্রিয় লোহানী চাচার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
আশ্চর্য, অসুস্থ হয়ে এই হাসপাতালেই লোহানী ভাই ভর্তি হয়েছিলেন এবং অগণিত গুণগ্রাহীকে কাঁদিয়ে এখান থেকেই চিরবিদায় নিয়েছেন।
টেলিভিশনের পর্দায় লোহানী ভাইয়ের অনুষ্ঠান দেখে যারা মুগ্ধ হতেন, তাদের অনেকের স্মৃতিতেই হয়তো এখন লোহানী ভাই নেই, কিন্তু একজন আম্বিয়া, সাঁকো পারের রাবেয়া যে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে, হাতকাটা আলতাফ, প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগ্রামীদের কথা, অ্যাসিড দগ্ধ বিউটিসহ যে অন্ধ কিশোরী লোহানী ভাইয়ের মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে- তারা কখনোই লোহানী ভাইকে ভুলতে পারবে না। কারণ তার মৃত্যুতে ওরাই কষ্ট পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। অনেক দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন। তাদের মিলিত কান্নায় তাঁর আত্মার সুখের শান্তির ফরিয়াদ করছে।
আজ তাঁর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে লাখো কোটি দর্শকের ভালোবাসার মানুষ, লোহানী ভাইকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব