সন্তান মা-বাবার খুবই আদরের। প্রত্যেক সন্তানের প্রতিই মা-বাবার ভালোবাসা থাকে হৃদয়ের গহিনে। যে ভালোবাসার কোনো মূল্য হয় না। সন্তান একটু অসুস্থ হলেই রাত জেগে সেবা করেন মমতাময়ী মা। ঝড়বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে বীরদর্পে এগিয়ে চলেন প্রত্যেক সন্তানের বাবা। সন্তানের মুখের হাসি দেখামাত্রই মা-বাবা হাজারো কষ্ট মুহূর্তে ভুলে যান। সন্তান অন্যায় করুক বিপদে পড়ুক তা মা-বাবা কখনোই চান না। সন্তানের জন্য মা-বাবার এত যে ভালোবাসা সেই সন্তান বড় হলে মা-বাবার সঙ্গে অনেক সময় সম্পর্কের তিক্ততা দেখা যায়। আত্মীয়, প্রতিবেশী, শয়তানের ধোঁকায় মা-বাবার সন্তানের প্রতি অবিচারের ঘটনা এখন নতুন কিছু না। এমনকি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা প্রিয় সন্তানের প্রতি এতটাই জুলুম করে যা একজন মা-বাবা হিসেবে কাম্য নয়। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন করা সবার জন্যই নিষেধ। হোক সে মা-বাবা কিংবা অন্য কেউ। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক সব সময়েই অটুট থাকাটাই স্বাভাবিক। যখন একটি পরিবারে দুইয়ের অধিক সন্তান থাকে তখন কিছুটা অমিল দেখা যায়। পরিবারের জন্য যে সন্তানটি প্রথমে নিজে উপার্জন করে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে অন্য ভাইদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড়, চাকরির ব্যবস্থা, বিদেশে পাঠানো কিংবা ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিন্তা করে বোনদের বিবাহের ব্যবস্থা, জমি ক্রয়, বাড়ি নির্মাণসহ পরিবারের সদস্যদের অর্থনৈতিক সহায়তা করে নিঃস্ব হয়ে জীবনের শেষ সময়ে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকেই অবমূল্যায়ন করা হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ভুলে যায় পরিবারের জন্য দেওয়া তার সব অবদান। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু মা-বাবা সেই সন্তানের অবদানও স্বীকার করতে নারাজ। সন্তানদের প্রতি সমতা রক্ষা না করেই পরিবারের জন্য খেটে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সন্তানের প্রতি চরম অবিচার করে। জমিজমা বণ্টনেও আল্লাহ নির্ধারিত নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা-পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার মাতা-পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি ভাইবোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা-পিতা ও তোমাদের সন্তানসন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জানো না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নিসা, আয়াত : ১১)
মা-বাবার কাছে সব সন্তানই সমান। সন্তানের প্রতি কোনো অবিচার করলে অবশ্যই মা-বাবাকেও হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে। এজন্যই সন্তানের প্রতি অবিচার করা ঠিক নয়। মা-বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি যে দায়িত্ব রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে পালন করা জরুরি। নিজের সন্তান ও পরিবারের বিষয়ে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের পরামর্শ নেওয়া থেকে বিরত থাকলেই ভালো। সন্তান, পরিবার, মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করতে হবে। সন্তানদের গালাগালি, মানসিক চাপ বা শারীরিক নির্যাতন পরিহার করে সুশিক্ষা প্রদান, অর্থনৈতিক আয়ের মাধ্যম বের করে উপযুক্ত সময়ে বিবাহের ব্যবস্থা প্রত্যেক মা-বাবাকে করতে হবে। ঘরে অন্যের মেয়েকে নিজের মেয়ে মনে করতে পারলেই পরিবারটি সুখী হবে বলে আশা করি। মা-বাবাকে ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসা রেখে সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন সাজাতে সন্তানদের উৎসাহ প্রদান জরুরি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারপরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরীম, আয়াত : ০৬)
সন্তানের প্রতি অবিচার করলেও সন্তানের উচিত মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। সন্তানের ব্যবহারে যেন মা-বাবা কষ্ট না পায়। কেননা তাদের মনে কষ্ট দেওয়া সন্তানের জন্য কাম্য নয়। মা-বাবা এবং সন্তান প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেননা প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। এ ব্যাপারে রসুল (সা.) বলেন, ‘মনে রেখো, তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
লেখক : ইসলামিক গবেষক