ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশ ভ্যানে ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ সানি মৃধা। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ প্রসিকিউশনের ২১তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি।
জবানবন্দিতে সানি মৃধা ওরফে সোহান মৃধা বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর আমরা পুলিশদের উদ্দেশে বলতে থাকি, হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা কেন এখনো গুলি করছেন? এ কথা শুনেই পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। এ সময় চাইনিজ রাইফেলের একটি গুলি আমার ডান পায়ের রানে ঢুকে দুই পা ভেদ করে বের হয়ে যায়।’
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা শেষে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৫ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। এদিন সকালে সাইফুলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালতে তোলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। চান্দগাঁও থানার মামলায় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সাবেক এই সিএমপি কমিশনার। প্রসিকিউশন জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় তিনজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক সিএমপি কমিশনারের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
সানি মৃধার জবানবন্দি : জবানবন্দিতে ২৯ বছর বয়সি সানি মৃধা ওরফে সোহান মৃধা বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্ট দুপুর বেলায় বাইপাইল এলাকায় অবস্থান করি। আনুমানিক বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে জানতে পারি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তখন আমরা সবাই বিজয় মিছিল করি। তখনো আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। তখন আমরা ছাত্র-জনতা সবাই আশুলিয়া থানার দিকে রওনা হই।’ জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, ‘আমরা যাওয়ার পর পুলিশ আশুলিয়া থানার কাছে গলির মধ্যে চলে যায়। ওই সময় আমরা পুলিশদের উদ্দেশে বলতে থাকি, হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা এখনো গুলি করছেন কেন? এরপর পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। তখন চাইনিজ রাইফেলের একটি গুলি আমার হাঁটুর ওপরে কোমরের নিচে ডান পায়ের রানে লেগে দুই পা ভেদ করে বাম পা দিয়ে বের হয়ে যায়। হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে শর্টগানের ছররা গুলি লাগে। ছররা গুলির মধ্যে ১৭টি পিলেট বের করা হয়েছে এবং ডান হাতে কনুইয়ে ১টি পিলেট এখনো রয়েছে।’
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ২ নভেম্বর : ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা পৃথক তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত সাক্ষী না নিয়ে এদিন ধার্য করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জানান, গতকাল মামলা তিনটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। দুজন সাক্ষী আদালতে হাজির হন। তবে এ তিন মামলার এজাহারনামীয় আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতির অপর তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। যেহেতু তিনি এই মামলাগুলোর এজাহারনামীয় আসামি। তাকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) জারির আদেশ দিয়েছেন।
তিনি জানান, আদালত আগামী রবিবার সাক্ষীর জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। ওইদিন আসামিকে আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয় মামলা করে দুদক। মামলায় শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও ২৩ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।