একুশের বইমেলা বাঙালির অস্তিত্বের অংশ। একুশের বইমেলা জনগণের বইমেলা। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে কোনো শক্তি বইমেলা বন্ধ করতে পারবে না। ১ ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা করতে চাই। ৪ নভেম্বরের মধ্যে বইমেলার ঘোষণা না এলে ৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে যথাসময়ে অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ আয়োজনের সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে লেখক, পাঠক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মীসহ দেশের সচেতন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সংগ্রামী জনগণ আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির যথাসময়ে বইমেলা আয়োজনে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন আলটিমেটাম দিয়েছেন একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাসার ফিরোজ শেখের সভাপতিত্বে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার শাহ আলম। আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ প্রমুখ।
কবি মোহন রায়হান বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য এবার বইমেলা হবে না। সালাম, বরকত, রফিক জব্বারের মতো প্রয়োজনে রক্ত ঢেলে দিয়ে আমরা বইমেলা রক্ষা করব। কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ বলেন, আমি তো মনে করি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন দরকার। সরকারের কেন যেন সোজা আঙুলে ঘি উঠছে না। সরকার কী করছে বুঝি না। তারা এক বছর ধরে নির্বাচন করতে পারছে না। ভয়ংকর দৈন্য অবস্থায় পড়েছে। রোজায় কি অফিস আলাদত বন্ধ থাকে? মেলা হোক। সরকারকে আহ্বান জানাব সময় থাকতে মেলা হোক।
লিখিত বক্তব্যে খন্দকার শাহ আলম বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম অন্তর্বর্তী সরকার অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। সরকারের এরূপ সিদ্ধান্ত দেশের হাজার হাজার লেখক, পাঠক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মীসহ ব্যাপক জনগণকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। তিনি বলেন, একুশের বইমেলা শুধু বই কেনাবেচার মেলা নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, এই জনপদের মানুষের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও স্বাধীকার-স্বাধীনতার সংগ্রামী চেতনা।
তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা স্থগিতের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জাতীয় নির্বাচন ও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় নির্বাচন দেশের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই, কিন্তু আমরা মনে করি নির্বাচনের পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে কোনো ক্রমেই একুশের বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও যথাসময়ে তা আয়োজনের ব্যবস্থা করে সরকার শুভবুদ্ধি ও সুবিবেচনার পরিচয় দেবেন, লেখক, পাঠক, প্রকাশক সর্বোপরি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মনোযোগী হবেন এবং মহান একুশের সংগ্রামী, গৌরবময় ঐতিহ্য ও চেতনা সমুন্নত রাখতে ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবি হাসান ফখরী, আলমগীর শিকদার লোটন, কবি টিমুনী খান রীনো, কবি তাসকিনা ইয়াসমিন, আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হাসান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লালটু।