চারদিকে সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে সবুজ পাতার মাঝে ঝিঙে, করলা, শসা বাতাসে দুলছে। পানির ওপর মাচা করে চলছে তরমুজ চাষ। ঘেরের পানিতে আছে মাছ। পানি শুকিয়ে গেলে সে জমিতে হয় ধান চাষও। লাভবান হচ্ছেন কৃষক। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদে বদলে গেছে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষি অর্থনীতি।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বটিয়াঘাটার রাজা খাঁর বিলের প্রায় সাড়ে ৭০০ বিঘা জমিতে তিন বছর আগেও লবণ পানির চিংড়ি চাষ হতো। তখন বিঘাপ্রতি কৃষকরা বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা জমির হাড়ি বাবদ (ব্যবহারের মূল্য) পেতেন। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিক কৃষি এ বিলের চেহারা বদলে দিয়েছে। এক বিঘা জমি থেকে এখন কৃষকরা বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন। শুধু বটিয়াঘাটার রাজা খাঁর বিল নয়, তরমুজ ও সবজি চাষে সাফল্য পাওয়ায় খুলনার ডুমুরিয়া, রূপসা, ফুলতলার বিভিন্ন বিলে এখন সুখের বাতাস বইছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খুলনায় ৯৬৬ হেক্টর জমিতে অফ সিজনে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে আগাম জাতের ঝিঙে, করলা, শসা চাষে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকের। রাজা খাঁর বিলের চাষি ইলিয়াছ হোসেন জানান, ‘এহানে লবণ পানি ছাড়া কিছুই ছিল না। পানিতে ঘাস পর্যন্ত হতো না। নিজের জমি থাকতি চাইল কিনে খাইছি। এহন বেড়ির ওপরে তরমুজ আর নিচে ধান হচ্ছে। আবার সিজিনে এহন মাছ আছে।’ বটিয়াঘাটার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, গত তিন বছর বিলে লবণপানি ঢোকানো বন্ধ হয়েছে। এরই মধ্যে সবুজে ছেয়েছে পুরো বিল। এখন ঘেরের মধ্যে মাছ চাষ হচ্ছে। ঘেরের পাড়ে চলছে সবজি ও তরমুজ চাষ। এ এলাকায় খোরপোষ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হয়েছে।
এক কেজি শসা বিক্রি করে হয়তো ৬-৭ টাকা লাভ করতে পারবে। কিন্তু অফ সিজন এক কেজি তরমুজে ২০-২৫ টাকা লাভ করতে পারছেন। বিলের চেহারা একেবারে বদলে গেছে। দুঃখের বিলে সুখের বাতাস বইছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, একই জমিতে কয়েক ধরনের ফসল উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এ গ্রামের কৃষি অর্থনীতি পরিবর্তন হয়েছে। ট্রাকের পর ট্রাক তরমুজ ভর্তি হয়ে শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। একই জমিতে একাধিক ফসলে শস্যের নিবিড়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।