দেশে ইয়াবা প্রবেশের হটস্পটে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ঢুকছে এ উপজেলা দিয়ে। এ অঞ্চলের কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে মরণনেশা ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি হওয়ায় ইয়াবার একটি বড় অংশ ওই শিবিরগুলোতে সাময়িকভাবে মজুত এবং পরে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, ‘সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি ও আশপাশ এলাকায় ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার বেড়েছে। তাই ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা বেশ কিছু চালান জব্দ করেছি।’
এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এবং বান্দরবান এলাকার স্থানীয় কয়েকজন জানান, বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে ঢুকছে ইয়াবার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর ঢেকিবুনিয়া এলাকা থেকে ইয়াবাগুলো তুমব্রু সীমান্তে আনা হয়। পরে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে পাঠায়। নাইক্ষ্যংছড়ির খুব কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। তাই ইয়াবার একটি বড় অংশ ওই শিবিরে সাময়িকভাবে মজুত করা হয়। পরে চাহিদা ও সুযোগ অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করছে মরণনেশা ইয়াবা। এসব পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে- ঘুমধুম, ফুলতলী, লম্বাশিয়া, রেজু আমতলী, আশারতলী, চেরারকুল, ভালুরখাইয়া, সোনাইছড়ি, নিকুছড়ি, চাকঢালাদৌছড়ি, কম্বনিয়া, উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি। ইয়াবার চালান মিয়ানমার সীমান্ত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি প্রবেশের পর সীমান্তঘেঁষা এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, বিভিন্ন বসতবাড়ি ও জঙ্গলে মজুত করা হয়। এর মধ্যে চাকঢালা, আশারতলী, কম্বনিয়া, চেরারকুল সীমান্ত থেকে আসা মাদক নাইক্ষ্যংছড়ির কলেজ রোড়, রেস্ট হাউস রোড, সোনাইছড়ি রোড, রূপনগর রোড এবং রামু উপজেলার মৌলভীরকাটা, কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ও শাহ সুজা সড়ক দিয়ে পাচার হয়। এর মধ্যে নিকুছড়ি থেকে আসা মাদকের চালান যায় আমতলীমাঠ, চাকঢালাসহ সোনাইছড়ি-ভগবান টিলা ও মরিচ্যায়। আর রেজু আমতলী পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করা ইয়াবা ঘুমধুম-উখিয়া-সোনাইছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি, ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, চাঁদের গাড়ি কিংবা কাঠ ও অন্যান্য পণ্যবোঝাই ট্রাকে নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে আসা মাদকের চালান তিনটি দুর্গম এবং দুটি প্রচলিত রুট ব্যবহার করেই ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। প্রচলিত দুটি রুটের মধ্যে রয়েছে- নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম-লামা-চকরিয়া-লোহাগাড়া-সাতকানিয়া-বান্দরবান-চট্টগ্রাম। ইয়াবার হটস্পটে পরিণত হওয়া নাইক্ষ্যংছড়ির উল্লেখসংখ্যক মানুষ পেশা বদলিয়ে ক্যারিয়ারের কাজ করছে।
ইয়াবা সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, কাঠ ব্যবসায়ী, ইজারাদার, ফার্মেসি মালিক, মোটরসাইকেল চালক, বাগান মালিক, ক্ষুদ্র দোকানদার, চাকরিজীবী, ওষুধ কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। যারা নিজেদের পেশাকে পুঁজি করে বর্তমানে মরণনেশা ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন।