গত সপ্তাহে ইরানের বিমান শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি পরিবহন বিমান 'সিমোর্গ' প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূলক উড়ান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে এই ফ্লাইটটি সম্পন্ন হয়। যা বিমানটির এয়ারওয়ার্থিনেস সার্টিফিকেশনের জন্য চূড়ান্ত মূল্যায়নের পথ খুলে দিয়েছে।
শাহীন শহর বিশেষ বিমান চলাচল অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক ইভেন্টটি ছিল প্রায় দেড় দশকের জাতীয় প্রচেষ্টার ফসল, যা প্রমাণ করলো যে বিমান নকশা ও উৎপাদনে ইরান আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পথে অনেকদূর এগিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ অর্গানাইজেশনের অধীনে থাকা ইরান এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি শক্তিশালী যমজ-ইঞ্জিন বিমানটি তৈরি করেছে। এটি ২১ হাজার ৫০০ কিলোগ্রাম (সর্বোচ্চ) টেক-অফ ওজনের ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৬ হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত কার্গো বহন করতে পারে, যার পাল্লা প্রায় ৩৯শ' কিলোমিটার। এতে থাকা দুটি ২৫শ' অশ্বশক্তির ইঞ্জিন এবং দ্রুত মালপত্র ওঠানামার জন্য একটি পিছনের লোডিং র্যাম্প এটিকে লজিস্টিক্যাল, মানবিক এবং আঞ্চলিক পরিবহনের মতো বহু-ভূমিকার জন্য অত্যন্ত উপযোগী করে তুলেছে।
সিমোর্গের এই উড়ান কেবল ইরানের প্রযুক্তিগত বিজয় নয়, এটি ইরানের শিল্প ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। দীর্ঘকাল ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ফলে বিমান আমদানি, ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইরানকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখন নিজেদের বিমান তৈরি করার মাধ্যমে দেশটি যেকোনো বহিরাগত সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা এড়াতে পারবে। সেই সাথে দেশীয় সরবরাহ ব্যবস্থা সুরক্ষিত থাকবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানটির উৎপাদন খরচ তুলনীয় বিদেশি মডেলের তুলনায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম। যা এটিকে অভ্যন্তরীণ বাজার এবং আঞ্চলিক রপ্তানির জন্য আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কার্যকরী বিমান তৈরি করতে অ্যারোডাইনামিক্স, উপাদান বিজ্ঞান, অ্যাভিওনিক্স, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সবকিছুর সুসমন্বয় প্রয়োজন। এই সফল সংহতি প্রমাণ করে যে ইরানের উৎপাদন ভিত্তি একটি নতুন মাত্রার সূক্ষ্মতা অর্জন করেছে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল