‘শুক্রবার আমার স্বামী জুমার নামাজ পড়তে রামপুরা থানার সামনের মসজিদে যায়। দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বাসায় নিয়ে আসেন। তখন আমার স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছিল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে।’
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এভাবেই নিজের স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা দেন পুলিশের গুলিতে নিহত বনশ্রীর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মো. নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় রামপুরার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনি প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ এ মামলায় পাঁচজন আসামি।
এ দিন এ মামলায় প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন বনশ্রীর সেলুন ব্যবসায়ী মো. ইয়াকুব। জবানবন্দিতে ১৯ জুলাই রামপুরা থানা থেকে পুলিশের গুলির বর্ণনা দেন তিনি। বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া গুলির দাগ এখনো দেয়ালে রয়েছে।’ পরে তাদের জেরা করেন পলাতক চার আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা তালুকদার প্রমুখ। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন নাদিমের স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিল তিন বছরের ছেলে আনাস বিন নাদিম। শপথ পড়ে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই স্বামী হত্যার পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন নিহা। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ‘স্বামী শহীদ নাদিম মিজান রামপুরার বনশ্রী এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতেন। গত বছর ১৯ জুলাই শুক্রবার আমার স্বামী জুমার নামাজ পড়তে রামপুরা থানার সামনের মসজিদে যান। আনুমানিক আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার স্বামীকে বাসায় নিয়ে আসেন। আমি দেখতে পাই আমার স্বামীর পেট থেকে রক্ত ঝরছিল।’
গুলির দাগ এখনো দেয়ালে : রামপুরার সেলুন ব্যবসায়ী মো. ইয়াকুব তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘১৯ জুলাই শুক্রবার আনুমানিক ৩টার দিকে আমি দোকানে ছিলাম। তখন বাইরে ঝামেলা দেখতে পেয়ে আমি আমার বাসার নিচতলার পার্কিংয়ে চলে আসি। আমাদের বিল্ডিংয়ের ছয় তলার বাসিন্দা মুসা, মুসার বাবা ও দাদিকে বিল্ডিংয়ের নিচে দেখতে পাই। আমরা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাইরে তখন গোলাগুলি হচ্ছিল। আমাদের ভবনটি রামপুরা থানার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত। তখন আমি দেখতে পাই থানার দিক থেকে পুলিশের ছোড়া একটি গুলি মুসার মাথায় লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে মুসার বাবা মুসাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়।’