জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠানের জন্য সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে গণভোট, সংস্কারসহ অন্যান্য অনৈক্যের বিষয়ে নিজেরা আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দলগুলো সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে এসব ইস্যুতে সরকার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। আসিফ নজরুল বলেন, গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লিখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। দেখা গেছে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোটের সময় ও এর বিষয়বস্তু কী হবে তা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নাই সেটা আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে সরকার কী করবে- এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ওনাদের সময় দিয়েছি। অপেক্ষা করব। তারপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো অ্যাক্ট করবে।’
দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আয়োজন সরকার করে দেবে কি না, জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার আয়োজন করে বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে চাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওনারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওনারা স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দেবেন সেই প্রত্যাশা করছি।’
ঐকমত্য কমিশনে যে আলোচনা হয়েছিল, বাস্তবায়নের সুপারিশে সেই আলোচনাগুলো সম্পূর্ণভাবে রাখা হয়নি বলে একটি বড় রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের এখন কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলোচনা করে আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দেবেন এই প্রত্যাশা করছি। ওনারা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’
গত সপ্তাহে আইন উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, গণভোটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নতি শিকার করে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছে কিনা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিদ্ধান্ত থেকে আমরা মোটেও সরে আসিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐক্যবদ্ধ সুপারিশ আশা করা নিশ্চয়ই ইতিবাচক ব্যাপার।’