গণভোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল, তার কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাই কোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন চার রিটকারী। পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল চেয়ে গতকাল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা (রিট আবেদনকারীরা) পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটাই বাতিল চেয়েছিলাম। কিন্তু হাই কোর্ট এর পুরোটা বাতিল না করে কিছু অংশ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছিলেন। ফলে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছি। যথাসময়েই শুনানি হবে।’
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ নামে পাস হয়। রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এ ছাড়াও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাকে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং এই অপরাধের শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে। আগে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান সংযোজন করা হয়।
এসব সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য আবেদনকারীরা হলেন প্রয়াত তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর গত বছরের ১৯ আগস্ট হাই কোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, ২০১১ কেন অসাংবিধানিক এবং বাতিল ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দল হিসেবে যুক্ত করা হয় গণফোরাম এবং ইনসানিয়াত বিপ্লব নামের একটি রাজনৈতিক দলকে। এ ছাড়া মোফাজ্জল হোসেন নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর রুল নিষ্পত্তি করে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করা হলো।