অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সমুদ্রতীরে এক শতাব্দীরও পুরনো একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, এটি রাজ্যের শত শত অজানা জাহাজডুবির তালিকায় এক নতুন সংযোজন।
ভিক্টোরিয়ার ওশেন গ্রোভ ও পয়েন্ট লনসডেলের মাঝামাঝি এলাকায় নিয়মিত হাঁটতেন স্থানীয় বাসিন্দা মার্ক লংডেন ও তার স্ত্রী লুসি। এক সকালে তারা সৈকতের বালুর ভেতর কাঠের কয়েকটি টুকরা দেখতে পান, যা সাধারণ ভেসে আসা কাঠের মতো নয়। কাছে গিয়ে দেখেন, এটি একটি পুরনো কাঠের জাহাজের অংশবিশেষ।
লংডেন ঘটনাটি জানালে তার বন্ধু কুইনসক্লিফ মেরিটাইম মিউজিয়ামের স্বেচ্ছাসেবক জেমি ম্যাককেচনি দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। তিনি ড্রোনে ছবি তুলে এবং অবস্থান পাঠিয়ে দেন হেরিটেজ ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে। পরে সংস্থার সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা সেখানে গিয়ে নিশ্চিত হন—এটি এক নতুন জাহাজডুবি।
হেরিটেজ ভিক্টোরিয়ার জ্যেষ্ঠ প্রত্নতত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল উইলকিনসন জানান, এটি একটি কাঠের তৈরি পালতোলা জাহাজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিটার। তিনি ধারণা করছেন, জাহাজটি সম্ভবত ১০০ বছর বা তারও আগে এখানে ডুবে গিয়েছিল।
গবেষকেরা বলেন, জাহাজটি স্থানীয় উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহৃত হতো—সম্ভবত মাছধরা বা বাণিজ্যিক কাজে। এটি কাঠের পেরেক (স্কয়ার-হেডেড নেইল) দিয়ে যুক্ত ছিল, যা এর নির্মাণকালকে ১৯শ বা ২০শ শতকের শুরুর দিকে ইঙ্গিত করে।
তারা এখন কাঠের নমুনা পরীক্ষা করছেন, যাতে কাঠের প্রজাতি ও বয়স নির্ধারণ করা যায়। এতে জানা যাবে, এটি রাজ্যের পরিচিত ৩–৪টি নিখোঁজ জাহাজের কোনো একটির সঙ্গে মেলে কি না।
ভিক্টোরিয়া উপকূলে মোট ৬৬০টি জাহাজডুবির তথ্য আছে, যার অর্ধেকেরও কম এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এসব জাহাজের বেশিরভাগই সমুদ্রতলে চাপা পড়ে আছে বা এখনো অনাবিষ্কৃত।
উইলকিনসন বলেন, এই ধরনের আবিষ্কার স্থানীয় ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আমরা চাই মানুষ এসব স্থানে ভ্রমণ করুক, ছবি তুলুক, কিন্তু কোনো অংশ সরিয়ে না ফেলুক বা ক্ষতি না করুক।
বর্তমানে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ আবারও বালুর নিচে ঢেকে গেছে। গবেষকেরা বলছেন, এটি ভালো দিক—কারণ বালুর নিচের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ কাঠকে সংরক্ষণে সাহায্য করে।
স্থানীয়দের মধ্যে এ আবিষ্কার ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। 
মার্ক লংডেন বলেন, প্রশ্ন জাগে—জাহাজটি কোথা থেকে এসেছিল? এর মানুষ বা পণ্য কী হয়েছিল? অন্যদিকে ম্যাককেচনির ভাষায়, জাহাজডুবির রহস্য একধরনের ধাঁধা। আর ধাঁধার সমাধান খোঁজার আকর্ষণ সবার মধ্যেই থাকে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল