২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি হয়েছে নির্বাচনি আবহ। সংশয় আর সংকট থাকলেও নির্বাচনমুখী হচ্ছে দেশ। গতকাল বিএনপি দেশের ২৩৭ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। জামায়াত অনেক আগেই প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দল শিগগিরই নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ছোট ছোট কয়েকটি দল নির্বাচনি আসন পেতে বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এর আগে বেশ কিছু রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ পার হতে হবে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোকে। এজন্য চলতি মাস নভেম্বরকে রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট সমাধান না হলে ব্যর্থ হবে জুলাই গণ অভ্যুত্থান।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অমীমাংসিত বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দলগুলোর ভিতরে চলছে এক ধরনের লড়াই। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ওইসব ইস্যুতে ঐকমত্য হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু ও সংস্কার নিয়ে গণভোট। এ দুই ইস্যু নিয়ে আপাতত দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। নিজেরা সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়ার পর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের কাঁধে। কয়েকদিন নিজেদের কোর্টে বল রেখে গতকাল হঠাৎ করে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়েছে। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- যদি দলগুলো এসব ইস্যু নিয়ে সমঝোতায় ব্যর্থ হয় তাহলে সরকার তার ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ রাজনীতির ‘লাস্ট চান্স’ হিসেবে দলগুলোর কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে সরকার। কারণ বিরোধপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিয়ে হবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচন দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রম পরিস্থিতির নির্বাচন হতে যাচ্ছে। চিরচেনা নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ এবার একেবারেই অনুপস্থিত। জুলাই গণ অভ্যুত্থান পাল্টে দিয়েছে রাজনীতির খোলনলচে। তাই এবারের নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে সব দলের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জের।
এ পরিস্থিতিতে নভেম্বর মাসকে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন বিষয়ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হতে হবে রাজনীতিবিদদের। নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলগুলোকে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। তার আগে রাজনীতিবিদদের ঠিক করতে হবে গণভোট কখন হবে। নির্বাচনের দিন নাকি নির্বাচনের আগেই। গণভোট ইস্যুর সমাধান করতে হবে চলতি মাসেই। কারণ ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। সে হিসেবে চলতি মাসই হচ্ছে সব ধরনের বিভেদ আর বিতর্কিত ইস্যুর সমাধানের মাস। এনিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও দলগুলোকে নানাভাবে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দলগুলোকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নুরুল আমিন বেপারি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এতে দলগুলো ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের পরাজিত শক্তিরা আবারও ফিরে আসার সুযোগ পাবে। জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জটিলতা তৈরি করেছে বলে জানান।