ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ভোট দিতে সবাই পারবেন। আমাদের হেন উদ্যোগ নেই, যা নেওয়া হচ্ছে না। গতকাল নিজের মন্ত্রণালয়ের এক বছরের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই-এর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। তিনি বলেন, নির্বাচনি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমাদের নিয়ত আছে বাংলাদেশের ইতিহাসে বেস্ট ইলেকশন দেওয়ার। আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে। এ সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পরবর্তী সরকার এসে অবশ্যই ধরে রাখবে। বিশেষ করে আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলা নিয়ে আমার বিরক্তি ও আপত্তি বহুবার প্রকাশ করেছি। বারবার আপনাদের বলি, আমাদের সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে দুটি ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে একটা হচ্ছে মিথ্যা মামলা। মামলা হতে পারে, কিন্তু মিথ্যাভাবে লোককে ফাঁসানো, মানে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা। আরেকটা হচ্ছে মব জাস্টিস। মব সন্ত্রাস আমি বলি। এই দুটা আমাদের খুবই পীড়িত করে।
আইন উপদেষ্টা তার লিখিত বক্তব্যে বিগত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত এক বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ করেছে।
সেগুলো হলো-আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনি সংস্কারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩, সংশোধন অন্যতম। যা সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে স্বতন্ত্র জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে মেধা, সুযোগের সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশোধন করে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার আনা হয়েছে। ফৌজদারি আইন সংশোধনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্তের অধিকারের নিশ্চয়তা, জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ পরিহার, তদন্ত প্রক্রিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনা, মিথ্যা মামলার হয়রানি রোধ করাসহ বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা ২০২৫’ এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্যবিবরণী তৈরি করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, গত এক বছরে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগের এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সূচারুভাবে সব ভুক্তভোগীকে এই সুযোগ চলমান রাখার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন।