বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে গম দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সময়ের সঙ্গে ফসলটির উৎপাদন সক্ষমতা কমে আসছে। গত ৪ বছরের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গমের আবাদ নেমে এসেছে দেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এরজন্য সরকারের সঠিক নীতিমালা না থাকাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ না ঘটলে ভবিষ্যতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হাজার টন গমের উৎপাদন কম হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ক্রমাগত হয়ে আসছে। ২১-২২ অর্থবছরে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টন গমের উৎপাদন হয়েছে। পরের অর্থবছরগুলোর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ বেড়ে ১১ লাখ ৭০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৭২ হাজার টন গমের উৎপাদন হয়েছে। ২৪-২৫ অর্থবছরে গমের উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টন। খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, জলবায়ুর পরিবর্তন মূলত গমের উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি গমের কুশিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ রোধের অতিরিক্ত খরচ, আবাদি জমি হ্রাস, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে চাষের ধারণা না থাকা, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব এবং উৎপাদন খরচ না পাওয়ায় কৃষক গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে উৎপাদন সক্ষমতা দিন দিন হ্রাস হচ্ছে। দেশের আবহাওয়াগত অবস্থান থেকে গম চাষের উপযোগী উত্তরের জনপদ। এই অঞ্চলগুলোতে শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় গমের উৎপাদন ভালো হয়। গত দুই বছর থেকে এই এলাকাতেও গমের চাষ হচ্ছে না বলে লালমনিরহাটের কৃষক ফাহিম জানান। সরকারি কিংবা বেসরকারি গম ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় গম বিক্রি করতে পারেননা বলেও দাবি করেন এই কৃষক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে বছরে গমের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত গম দিয়ে ১১ লাখ টনের চাহিদা মেটানো হয়। বাকি ৬০-৬৪ লাখ টনের চাহিদা রাশিয়া, ব্রাজিলের মতো দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে পুরণ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর আব্দুস সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে উৎপাদন কমার কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে গম আমদানি করতে হচ্ছে। যা কোন ভাবেই কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে না। তার থেকে চালের গুড়ো কিংবা ভুট্টার আটা ব্যবহারে মনোযাগ বাড়ানো দরকার।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ জাহেরুল ইসলাম বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণত যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেগুলো অবশ্যই নেওয়া হচ্ছে। দেশের আবহাওয়া এমন নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উৎপদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি। আমাদের উৎপাদিত নতুন জাত ভালো ফলন দেয়। যা পৃথিবীর আর কোন দেশে দেয় না। কিন্তু আমাদের কৃষি পলিসি উন্নত দেশের মতো শক্তিশালি না হওয়ায় কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।