সফলতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং সঠিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করা। মানুষ যখন মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে পরিশ্রম করে, লেগে থাকে, তখন মহান আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এই যে মানুষ তা-ই পায়, যা সে চেষ্টা করে।’ (সুরা : আন নাজম, আয়াত : ৩৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি যা পরিণতি ভোগ করবে তা তার কৃতকর্মেরই ফল। চেষ্টা-সাধনা ছাড়া কেউ-ই কিছু লাভ করতে পারে না। (কুরতুবি)
পৃথিবীতে যত মানুষ স্মরণীয় বরণীয় হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সফলতা অর্জনের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে গেছেন। যেমন-আইনস্টাইন বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন—‘আমি এতটা মেধাবী নই; আমি শুধু সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘ সময় লেগে থাকি।’
একইভাবে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমার কোনো বিশেষ প্রতিভা নেই। আমি শুধু প্রবলভাবে কৌতূহলী।’
(লস অ্যাঞ্জেলেন্স টাইমসের একটি প্রবন্ধ It’s A Gray Area: Einstein’s brilliant thoughts pertinent to today’s woes থেকে নেওয়া)
অর্থাৎ সঠিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম ও লেগে থাকার প্রবণতা তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘লাগি থাকলে ভাগি হয়’ অর্থাৎ কোনো বিষয়ে লেগে থাকলে কিছু না কিছু পাওয়া যায়।
বিষয়টি শুধুই একটি আঞ্চলিক প্রবাদ নয়, বরং এর ইসলামী ভিত্তিও আছে। সাধারণত কোনো কিছুই সাধনা ছাড়া পাওয়া যায় না। এমনকি মহান আল্লাহকে পেতে হলেও তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতিতে চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা-সাধনা করবে, মহান আল্লাহই তাদের সঠিক পথ বাতলে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করবে, তাদের আমি আমার পথ দেখাব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীল লোকদের সঙ্গে রয়েছেন।’
(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে তাদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম দেয়, মহান আল্লাহ তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন না; বরং তিনি তাদের সুপথ দেখান এবং তাঁর দিকে যাওয়ার পথ তাদের জন্য খুলে দেন। তারা তাঁর সন্তুষ্টি কিভাবে লাভ করতে পারে তা তিনি প্রতি পদে পদে তাদের জানিয়ে দেন। এই আয়াতের তাফসিরে ফুদাইল ইবনে আয়াদ বলেন, যারা বিদ্যার্জনে ব্রতী হয়, আমি তাদের জন্য আমলও সহজ করে দিই। (বাগভি)
আসলে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ব্যাপারে যেমন ধারণা রাখে, আল্লাহ তাদের জন্য তেমন। যে যেমন চলতে চায়, সে অনুযায়ী আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে চলতে চায়, আল্লাহ তার জন্য সেভাবে চলা সহজ করে দেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর কাছে কিছু আনসারি কিছু চাইলে তিনি তাদের দান করলেন, তারা আবার চাইলে তিনি তাদের পুনরায় দান করলেন। এভাবে দান করতে করতে তাঁর সম্পদ শেষ হয়ে গেল। তখন তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সম্পদ থাকলে আমি তোমাদের না দিয়ে তা জমা করে রাখি না। কেউ সওয়াল থেকে পবিত্র থাকতে চাইলে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী রাখেন এবং যে ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক ব্যাপক কিছু দান করা হয়নি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪৪)
তাই মুমিনের উচিত, যেকোনো বিষয়ে সফলতা চাইলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক সে পথে চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাওয়া। আর সব ক্ষেত্রে আখিরাতের সফলতাকেই প্রাধান্য দেওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে। তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৯)
বিডি প্রতিদিন/এমআই