ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার চারটি নতুন রেল প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেকের কাছে মাল্টিট্র্যাকিং, দেশের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদন অঞ্চলে রেল সম্প্রসারণ এবং দিল্লি-চেন্নাই উচ্চ ঘনত্বের রেল নেটওয়ার্কের একটি অংশে নতুন লাইন নির্মাণ।
এই চারটি প্রকল্প মিলিয়ে মোট ৫৭৪ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হবে। ছয়টি রাজ্যের ১৩টি জেলার ওপর দিয়ে এই প্রকল্পগুলি বিস্তৃত এবং এর মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১১,১৬৮ কোটি টাকা।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পটি হলো মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্রের নাগপুর পর্যন্ত চতুর্থ রেললাইন নির্মাণ, যার দৈর্ঘ্য ২৯৭ কিলোমিটার এবং খরচ ধরা হয়েছে ৫,৪৫১ কোটি টাকা। এই রুটটি দিল্লি-চেন্নাই করিডরের অন্তর্গত এবং এটি মুম্বাই-হাওড়া রেলপথের সঙ্গে নাগপুরে মিলিত হবে। এই লাইন নির্মাণে থাকছে ৩৭টি স্টেশন, ৩৬টি বড় সেতু, ৪১৫টি ছোট সেতু, ২টি ওভারপাস, ৭৪টি আন্ডারপাস, ৪টি টানেল ও ২টি রেল ওভারব্রিজ। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই লাইন নির্মাণের ফলে নেটওয়ার্কে ভিড় কমবে এবং ট্রেন চলাচল দ্রুততর হবে।
দ্বিতীয় প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের মধ্যে ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আলুয়াবাড়ি রোড থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ। এই অঞ্চলটি তথাকথিত ‘চিকেনস নেক’-এর কাছে অবস্থিত, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি ভারতের সংযোগের একমাত্র রুট। প্রকল্পটি ভারত, ভুটান, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নির্মিত হবে ৯৯টি সেতু, ৩টি ওভারপাস এবং ৮টি আন্ডারপাস। এই লাইন সম্প্রসারণের ফলে বছরে অতিরিক্ত ২১.৬ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে।
তৃতীয় প্রকল্পটি ওড়িশার কেন্দুজহাড় এবং ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার মধ্যে ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাঙোআপোসি থেকে জারোলি পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ। এই অঞ্চলটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লৌহ আকর উত্তোলন ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র। ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প দেশের বার্ষিক ৩০০ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে। এর খরচ ধরা হয়েছে ১,৭৫২ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রকল্পটি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ (ছত্রপতি সম্ভবাজীনগর) থেকে পরভনি পর্যন্ত ১৭৭ কিলোমিটার রেলপথ ডাবলিং। এটি মারাঠওয়াড়া অঞ্চলের সংযোগ আরও মজবুত করবে এবং মুম্বাই ও সেকেন্দ্রাবাদের মধ্যে বিকল্প রুট হিসেবে কাজ করবে। এই প্রকল্প জালনা ড্রাই পোর্ট, দীনগাঁও ও দৌলতাবাদ মালগাড়ি শেড এবং আসন্ন ঔরঙ্গাবাদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটির সঙ্গে রেল সংযোগ উন্নত করবে। প্রকল্পে থাকছে ২৮টি বড় সেতু, ১৬১টি ছোট সেতু এবং ২৯টি আন্ডারপাস। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এর ফলে অতিরিক্ত ১৪.৩ মিলিয়ন টন মাল পরিবহন সম্ভব হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল