একসময় এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ নদী হিসাবে পরিচিত ছিল মেঘালয়ের উম্নগোট বা ডাউকি নদী। কাচের মতো স্বচ্ছ, টলটলে পানির জন্য এই নদী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ছিল এক বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু চলতি মরসুমে সেই পরিচিত ছবিটা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। ঘোলাটে পানি দেখে হতাশ হয়ে ফিরছেন পর্যটকেরা, যার ফলস্বরূপ পর্যটন মৌসুমে উদ্বেগ বাড়ছে মেঘালয় রাজ্য সরকারের।
পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ডাউকি এবং শনংপডেংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে এখন হতাশার সুর। শনংপডেংয়ের এক ক্যাম্পিং সাইট পরিচালকের কথায়, বর্ষায় ঘোলা পানি স্বাভাবিক হলেও, সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি তা পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু এ বার তা হয়নি। পর্যটকেরা ঘোলাটে জল দেখে ফিরে যাচ্ছেন।
নদীর এই অবস্থার জন্য সরাসরি ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে রাজ্য এবং বিরোধী দল। মেঘালয়ের বিরোধী দল ভয়েস অফ দ্য পিপলস পার্টির (ভিপিপি) দাবি, শিলং-ডাওকি করিডরের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এনএইচআইডিসিএল-এর নির্মাণকাজের জেরেই এমনটা ঘটছে।
ভিপিপি সাংসদ রিকি সিংকন কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গডকরী এবং পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে চিঠি লিখে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। তার স্পষ্ট অভিযোগ, একের পর এক প্রকল্পের অধীনে পাহাড় কাটার সময় মাটি, বালি ইত্যাদি নদীতে ফেলার ফলেই উম্নগোটের পানি ঘোলাটে এবং নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে।
মেঘালয় মন্ত্রিসভার সদস্য তথা এলাকার বিধায়ক লাহকমেন রিম্বুই সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাজ্য সরকারও এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী প্রেস্টোন টিনসং এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য এনএইচআইডিসিএল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে, এনএইচআইডিসিএল-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্তা স্বীকার করেছেন যে উম্নগোট নদীর উপর একটি জটিল সেতু নির্মাণের কাজ চলছে (১০০ মিটার উঁচু এবং ৪০০ মিটার লম্বা)। তিনি জানান, কাজ করার সময় যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পর্যটন ও পরিবেশ, উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ উম্নগোট নদীর হৃতস্বচ্ছতা কবে ফিরবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে পরিবেশপ্রেমী মহল এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল