যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার অরফিল্ড ল্যাবরেটরিজের একটি বিশেষ কক্ষে প্রবেশ করলে আপনি এমন এক নিঃশব্দ পরিবেশ পাবেন, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। এই কক্ষটি এতটাই নীরব যে এখানে পটভূমির (ব্যাকগ্রাউন্ড) শব্দ মাপা হয় নেগেটিভ ডেসিবেলে, যা মানব কানের সীমার নিচে পড়ে।
কক্ষের নিঃশব্দে মানুষ নিজের শরীরের অন্দরের শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা পান। রক্ত সঞ্চালন, ফুসফুসের গতি, এমনকি চোখের পলকের শব্দও শোনা যায়। ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভেন অরফিল্ড বলেছেন, যত নীরব কক্ষ, তত বেশি আপনি নিজের শরীরের শব্দ শুনতে পারবেন। এখানে আপনি নিজেই ‘শব্দ’ হয়ে উঠবেন।
কক্ষটিী বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি অ্যানেকোয়িক চেম্বার, যার দেয়াল শব্দ প্রতিফলন রোধ করে। কক্ষটি কংক্রিট এবং স্টিলের একটি বহুপাত্রিক কাঠামোর মধ্যে রাখা হয়েছে। দেয়াল, মেঝে এবং চারপাশে ফাইবারগ্লাসের কোণীয় চাকা বসানো, যা শব্দ শোষণ করে। দর্শনার্থীরা ঝুলানো মেঝের ওপর দাঁড়ান, যেন মেঝের শব্দও শোনা না যায়।
এই কক্ষ শুধুই দর্শনার্থীর জন্য নয়। কোম্পানিগুলো এখানে তাদের পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারে, কতটা শব্দ উৎপন্ন হয়। নাসা এখানে নভোচারীদের প্রশিক্ষণের জন্যও পাঠিয়েছে যেন তারা মহাকাশের নিঃশব্দে অভ্যস্ত হতে পারে।
তবে সাধারণ মানুষের জন্য এটি চরম ডিসঅরিয়েন্টিং। কোনো পটভূমির শব্দ না থাকায় মানুষের চলাফেরায় সমন্বয় করতে অসুবিধা হয়। অরফিল্ড বলেছেন, আপনি যদি অর্ধঘণ্টার বেশি সময় থাকেন, তবে অবশ্যই একটি চেয়ারে বসতে হবে।
তবে এই অভিজ্ঞতা পেতে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। চারজনের সঙ্গে এক ঘণ্টা থাকতে লাগে ৭৫ ডলার। এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের গ্রুপ ট্যুর (২০ মিনিট কক্ষে) ২০০ ডলার।ব্যক্তিগত এক ঘণ্টার অভিজ্ঞতা নিতে লাগবে ৪০০ ডলার।
এই কক্ষের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। ১৯৭০ সালে এটি রেকর্ডিং স্টুডিও হিসেবে নির্মিত হয়। বিখ্যাত শিল্পীরা যেমন, বব ডিলান এবং প্রিন্স এখানে কাজ করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল