টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাস ১৪৮ বছরের। ক্রিকেটের এলিট শ্রেণিতে বাংলাদেশের বয়স ২৫ বছর পেরিয়েছে। এই আড়াই দশকে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১৫৪টি। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে না হারালেও হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে। টেস্ট ক্রিকেটে গতকাল ছিল বাংলাদেশের ২৬তম জন্মদিন। জন্মদিনের ২৪ ঘণ্টা পর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নাজমুল হোসেন শান্তের নেতৃত্বে টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। সিলেটে এটা টাইগারদের পঞ্চম টেস্ট এবং অভিষেক হবে আইরিশদের। এ টেস্ট আবার মুশফিকুর রহিমের জন্য স্পেশাল। সাবেক অধিনায়কের ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে এটা ৯৯তম টেস্ট। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত ৯৯টি টেস্ট খেলেনি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৯ নভেম্বর মিরপুরে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার বিরল কীর্তি গড়বেন মুশফিক।
মুশফিকের পাশাপাশি সিলেট টেস্টটি স্পেশাল বর্তমান অধিনায়ক নাজমুলের জন্যও। গত জুলাইয়ে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক, মেনে নিতে পারেননি নাজমুল। অভিমানে টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিসিবি সহসভাপতি ফারুক আহমেদের বিশেষ অনুরোধে তিনি পুনরায় টেস্ট অধিনায়ক হতে রাজি হন। ১২৬ দিন পর আজ টস করবেন নাজমুল। পুনরায় নেতৃত্ব দিতে রাজি হওয়া প্রসঙ্গে গতকাল সিলেটে মিডিয়ার মুখোমুখিতে নাজমুল বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড যেভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, সবার সঙ্গে সুন্দর আলাপচারিতা হয়েছে। একটা সময় গিয়ে মনে হয়েছে আমি নাজমুল হোসেন ব্যক্তির চেয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেক বড়। আমার নিজের চিন্তার থেকে বড় চিন্তা বাংলাদেশ দলের কী প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে গত জুনে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় টেস্টটি হেরেছিল নাজমুল বাহিনী। ৪ মাস পর লাল বল ও সাদা পোশাকে খেলতে নামছে টাইগাররা। আয়ারল্যান্ড সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল গত এপ্রিলে। বুলাওয়ের টেস্টটি জিতেছিল আইরিশরা। সে হিসেবে সিলেটে আজ আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে নামবে এন্ড্রু বালবার্নি একাদশ। তবে দুই দল এখন পর্যন্ত একটি মাত্র টেস্ট খেলেছে। ৩০ মাস আগে ২০২৩ সালে মিরপুরে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। মুশফিকের সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে টেস্টটি জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দুই দল খেলবে সিলেটে। দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামটিতে এখন পর্যন্ত ৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র জয় পেয়েছিল ১৫০ রানে। ২০১৮ সালের স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল ১৫১ রানে। ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২৪ রানে এবং সর্বশেষ গত এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে যায় ৩ উইকেটে টাইগাররা।
দেশের অন্য টেস্ট ভেন্যুগুলোর তুলনায় সিলেটের উইকেট একটি বেশি হার্ড। বাউন্স বেশি বলে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পান। অবশ্য স্পিনাররাও সুবিধা পেয়ে থাকেন। নাজমুল বাহিনীর স্কোয়াডের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ৫৫ টেস্টে তাইজুলের উইকেট ২৩৭টি। তার চেয়ে উইকেট বেশি সাকিব আল হাসানের, ২৪৬টি। মেহেদি হাসান মিরাজের উইকেট ৫৪ টেস্টে ২০৫টি। তাইজুল ও মিরাজ একত্রে ৯৯ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ৪৪২টি। মুশফিকের মতো তাইজুলের জন্যও সিরিজটি স্পেশাল। মাত্র ১৩ উইকেট পেলেই বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে আড়াই শ উইকেটের ক্লাবে নাম লিখবেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল। স্কোয়াডে অবশ্য আরও একজন স্পিনার রয়েছেন। বাঁ-হাতি স্পিনার হাসান মুরাদের না খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকদিন পর দলে ফিরেছেন ডান হাতি পেসার ইবাদত হোসেন। অধিনায়ক নাজমুল একাদশ সাজাতে পারেন তিন পেসার দিয়ে। ইবাদত, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদের মধ্যে যে কোনো তিন পেসার খেলতে পারেন।
ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিকই ভরসা। এ ছাড়া অধিনায়ক নাজমুল ছাড়া রয়েছেন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক ও টি-২০ অধিনায়ক লিটন দাস রয়েছেন। নাজমুল বাহিনীর মিডল অর্ডার সামলাবেন মুশফিক, মুমিনুল, লিটন এবং তাদের সঙ্গে রয়েছেন স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ। নতুন বলে সুইং ও গতি সামলাবেন বাঁ-হাতি ব্যাটার সাদমান ইসলাম ও ডান হাতি ব্যাটার মাহামুদুল হাসান জয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে টি-২০ বিশ্বকাপ। তার প্রস্তুতিতেই বাংলাদেশ ব্যস্ত সময় পার করেছে রঙিন পোশাক ও সাদা বলের ম্যাচে। এবার ঘরের মাঠে টেস্ট খেলবে গত এপ্রিলের পর।