বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে সরকারপ্রধানকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়াও মঞ্চের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিক ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে ছয় দফা দাবি তুলে ধরে অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এ কে এম জামির, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম, বাবুল বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া; ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার; আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; গ্রেপ্তার বিরোধী নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি; তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু; ঢাকাসহ সারা দেশে ব্লক রেইড বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি মেনে নেওয়া।
সাইফুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে সরকার ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে-এর সমুদয় দায়দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। আমরা সরকারকে জনগণের জানমালের এ বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করার আহ্বান জানাই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে। আমরা দেশের সব গণতন্ত্রকামী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও শ্রেণি-পেশার সংগঠন এবং মুক্তিকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে উদাত্ত আহ্বান জানাই।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, সরকার ও সরকারি দল কার্যত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যেভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দমনের চেষ্টা চালিয়েছে তার বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার-নিপীড়ন করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নূরকে নির্যাতন করা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়কারীকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন ও জোর করে আন্দোলনের সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড ও নির্মমতার নিন্দা জানাই।
গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন কর্মসূচি : সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল-জোটসহ গণতন্ত্র মঞ্চ সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে।