একজন তারকা ফুটবলার অবসর নেওয়ার পর যদি কোচ হন তাহলে তিনি ফুটবলকে বেছে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। গোলাম সারওয়ার টিপু, কাজী সালাউদ্দিনসহ অনেকে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টেনে ফুটবলের কোচ হয়েছেন। কিন্তু ফুটবলাররা কি কখনো ক্রিকেটের কোচ হয়েছেন? কাজী আনোয়ার হোসেনই ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের ফুটবলে যিনি আনোয়ার নামেই পরিচিত। সত্তরের দশকে তিনি খুলনা প্রথম বিভাগ লিগে নিয়মিত খেলতেন। তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে অমলেশ সেন ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালেই ঢাকা লিগে তার অভিষেক হয় দেশখ্যাত আবাহনী ক্রীড়া চক্রে। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আবাহনীতে থেকেই তারকা খ্যাতি পেয়ে যান। সুযোগ মেলে জাতীয় দলে।
১৯৭৬ থেকে ’৮৪। অর্থাৎ আট বছর জনপ্রিয় আবাহনীর জার্সি পরে মাঠে নামেন। ’৮২ সালে দেশের অন্যতম সেরা এই দলের অধিনায়ক হন। আনোয়ার থাকা অবস্থায় আবাহনী চারবার লিগ জিতেছে। এর পেছনে তার অবদান ভোলার নয়। ’৮২ সালে বিনা কারণে সালাউদ্দিন, চুন্নু ও হেলালের সঙ্গে জেলও খেটেছেন। বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা ফুটবলার ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে এত অর্জন। প্রশিক্ষক হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিলেন কেন? বললেন, ‘আমি শুধু ফুটবলই খেলেছি তা বলা যাবে না। দীর্ঘ ১৬ বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে লিগ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার।’
আনোয়ার আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমি তো প্রথমে চেয়েছিলাম ফুটবলে কোচ হতে। কোচিংয়ে এএফসির ‘সি’ লাইসেন্সের সনদও রয়েছে। পিডবিøউডি, ওয়ারী, ইস্কাটন সবুজ সংঘে হেড কোচ। আবাহনীতে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করি। দেখলাম এখান থেকে কোনো রিটার্ন কিছু পাচ্ছি না। মূল্যায়নও তেমন নেই। সংসার চালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছি বন্ধুরা অনুরোধ রাখলেন ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে কোচ হতে।’ আনোয়ার জানালেন, ‘সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে কোচিং সেন্টার খুলে বসলাম ১৯৯৭ সালে। এসিসি নামেই ট্রেনিং সেন্টার চলত। দেখলাম অনেক কিশোর আমার সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। আমার কর্মকান্ড দেখে বিসিবি সন্তুষ্ট হয়ে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।’ আনোয়ার কোচিং সেন্টারে অর্থ দিয়েই ক্রিকেট শিক্ষা নিতে হয়। আনোয়ার বললেন, ‘অবশ্যই এটা তো আমার পেশা। ১৯৯৪ সালে শুরু করেছিলাম ভর্তি ফি ৫০০ ও মাসিক বেতন ৩০০ টাকা দিয়ে। এখন যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ও ১ হাজারে।’ শুরু থেকেই আনোয়ারের প্রশিক্ষণ আবাহনীর মাঠে চলছে।