১৯৮০ সালে মোহামেডান হঠাৎ করেই ভুটান থেকে উড়িয়ে এনেছিল খড়ংগ বাসনাতকে। তাকে সুপার লিগে দুটি ম্যাচে মাঠে নামানো হয়েছিল। পুরো সময় খেলতে পারেননি। কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু তাকে তুলে নিয়েছিলেন। বাসনাত ঢাকা ছাড়ার আগে বলেছিলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি মোহামেডানের মতো বিখ্যাত ক্লাব আমাকে কেন খেলতে নিয়ে এলো।’ বাসনাতকে আনার পেছনে মূল কারণ ছিল ওই সময় মোহামেডানের এক কর্মকর্তা ভুটানে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার লোকাল লিগে বাসনাতের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি নিজেই বাসনাতকে নিয়ে আসেন। বাসনাত বলেছিলেন, ‘আমি গর্বিত যে মোহামেডানের মতো বিখ্যাত ক্লাবের হয়ে কিছু সময় হলেও খেলতে পেরেছি।’
পুরো সময় না খেলায় আক্ষেপ আছে কি না। এ নিয়ে ওই সময় ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমসে তার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি কি এত বড় লিগে খেলার যোগ্য? মোহামেডানে তো ভালো খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি। সুতরাং এখানে যতক্ষণ খেলতে পেরেছি সেটাই আমার ক্যারিয়ারে বড় প্রাপ্তি। ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে আকর্ষণ ও গ্যালারি ভরা দর্শক দেখে আমি অভিভূত। বাংলাদেশে অসংখ্য ভালো ফুটবলার রয়েছে। যাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’ বাসনাত এটাও বলেছিলেন, ‘ভুটানে ফিরে আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের দেশের ফুটবল উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা নেওয়া যায় কি না। প্রয়োজনে আমি বিষয়টি ভুটানের রাজাকে জানাব। কারণ বাংলাদেশের সহযোগিতা পেলে ভুটান উপকৃত হবে।’
৪৪ বছরের আগের কথা। প্রশ্ন উঠতে পারে এত দিন পর বাসনাতকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন? বিষয়টি প্রাসঙ্গিক বলেই আলোচনায় উঠে এসেছে। কেননা যে বাসনাত বাংলাদেশের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার দেশই এখন বাংলাদেশকে হারিয়ে দিচ্ছে। ভুটানের ফুটবল উন্নয়নে তিনি বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। এখন তারাই কি না বাংলাদেশকে নাস্তানুবুদ করছে। শুধু ভুটান কেন নেপাল কখনো বাংলাদেশকে হারাবে তা চিন্তায় করায় যেত না। আগা খান গোল্ড কাপে দুটি দেশ ঢাকার ক্লাবগুলোর সামনে দাঁড়াতেই পারত না। গোলের বন্যায় ভেসে যেত। মালদ্বীপ তো তখন আর ফুটবলে পরিচিত দেশ ছিল না। তাই দুটি দেশেরই মান নিয়ে কথা হচ্ছে।
নেপালকে হারানোটা এখন ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বনাশ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ভুটানের কাছেও লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ২০১৬ সালে থিম্পুতেই বাংলাদেশ ১-৩ গোলে হারে। ভুটানের বিপক্ষে এটিই ছিল প্রথম হার। এ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে ধিক্কার পড়ে যায়। তবে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘এ নিয়ে এত হই চই কেন বুঝতে পারছি না। ফুটবলে তো দুর্ঘটনা হতেই পারে।’ তিনি তো এখনো সভাপতির চেয়ারে আছেন। এবার তাহলে কি বলবেন? রবিবার থিম্পুতে ফিফা টায়ার-১ দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে ভুটান ১-০ গোলে বাংলাদেশকে হারায়। তাও আবার ৯১ মিনিটে।
প্রথম ম্যাচে শেখ মোরসালিনের গোলে জয় পেলেও তা ছিল ভাগ্যক্রমে। অধিকাংশ সময়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ রাখে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের খেলা দেখে তো মনে হয়েছে পাড়ার কোনো দল। চাংলিমিঠাং স্টেডিয়ামে পুরোটা সময়ে তপুরা ছিলেন ছন্নছাড়া। ভুটানের ভাগ্য খারাপ বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি। দুই দেশের জয়ে পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এখনো এগিয়ে। তারপর প্রশ্ন উঠেছে ভুটানের কাছে হারলে সর্বনাশের আর বাকি থাকল কী? হারের পর কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছেন, দলের আরেকটু উন্নতি দরকার। তার মানে কি ফুটবলে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। আরেকটু হলে তিনি খুশি।
বাংলাদেশের হার নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বলেন, ‘প্লিজ জাতীয় দল নিয়ে আর প্রশ্ন করবেন না। সালাউদ্দিন ভাই ফুটবলকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। উনি না যাওয়া পর্যন্ত এমনই ঘটবে। তারপরও সবাই নীরব।’ আরেক তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘ফুটবলে ব্যর্থতা খুঁজতে তদন্ত করার সময় এসেছে। দেশের মান নিয়ে আর কত ছেলে খেলা হবে। শুধু ফুটবল নয় গত ১৫ বছরে ফুটবল ফেডারেশনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার করা উচিত। তা না হলে পরিণতি আরও করুণ হবে। প্রয়োজনে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে শুধু ফুটবল ঘিরেই সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে ফুটবল বাঁচাতে হবে।’