চতুর্থ দিন শেষে চট্টগ্রাম টেস্টে হারের শঙ্কায় পড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে পঞ্চম ও শেষদিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ১১৯ রান করতে হবে টাইগারদের। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫১৩ রানের জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ৭১৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২০০ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৮১ রান করেছে বাংলাদেশ।
ওপেনার কুশল মেন্ডিসের ১৯৬ ও ধনানঞ্জয়া ডি সিলভার ১৭৩ রানের পর রোশন সিলভার অপরাজিত ৮৭ রানের সুবাদে ১৩৮ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৫০৪ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিলো শ্রীলঙ্কা। তাই তৃতীয় দিন শেষে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ৯ রানে পিছিয়ে ছিলো লঙ্কানরা।
সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করেছিলেন রোশন। প্রথম সেশনেই নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টেই প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর ব্যক্তিগত ১০৯ রানে থেমে যান তিনি। তার উইকেটটি নিয়েছেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমালের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১৩৫ রান যোগ করেছিলেন রোশন। তার ২৩০ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল।
এরপর শ্রীলঙ্কার রানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন চান্ডিমাল ও উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলা। রান তোলার কাজটা অনায়াসে করেছেন তারা। তাই ৩৭ রান নিয়ে শুরু করে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে তিন অংকের কাছে পৌছে যান চান্ডিমাল। কিন্তু চান্ডিমালের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন চান্ডিমাল। তাইজুলের আর্ম ডেলিভারিটিকে বুঝতেই পারেননি লংকান অধিনায়ক। তাই চান্ডিমালের ব্যাট ও পা’র মাঝ দিয়ে বল ঢুকে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ৩টি চারে ১৮৫ বল মোকাবেলায় নিজের ইনিংস সাজান চান্ডিমাল। পঞ্চম উইকেটে ডিকবেলার সাথে ৬৩ রান যোগ করতে সমর্থ হন তিনি।
চান্ডিমালের মত হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ডিকবেলাও। টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৬১ বলে ৬২ রানে থামেন তিনি। মিরাজের তৃতীয় শিকার হবার আগে ৯টি চারও মেরেছেন ডিকেবলা।
এরপর ছোট ছোট দু’টি ইনিংসে শ্রীলঙ্কার রানকে ৭শ’ পার করিয়ে দেন দুই টেল-এন্ডার দিলরুয়ান পেরেরা ও বর্ষীয়ান রঙ্গনা হেরাথ। পেরেরা ৩২ ও হেরাথ ২৪ রান করেন। পেরেরাকে ফিরিয়ে অভিষেক টেস্টে প্রথম উইকেট শিকারের স্বাদ নিয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম।
২০০তম ওভারের তৃতীয় বলে হেরাথকে বিদায় দেন তাইজুল। এরপরই নিজেদের ইনিংসের সমাপ্তি নিজেরাই টানেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চান্ডিমাল। ইনিংস ঘোষণার সময় লঙ্কানদের রান ছিল ৯ উইকেটে ৭১৩ রান। যা চট্টগ্রামের যেকোন ভেন্যুতে টেস্ট প্লেয়িং যেকোন দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এছাড়া এই নিয়ে নিজেদের টেস্ট ইনিংসে ষষ্ঠবারের মত ৭শ বা তার চেয়ে বেশি রান করলো শ্রীলঙ্কা। এই ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ইসলাম ৪টি, মেহেদি হাসান মিরাজ ৩টি ও মুস্তাফিজুর রহমান-সানজামুল ইসলাম ১টি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ২০০ রানের লিড পাওয়ায় চাপের মধ্যে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তাই দিনের শেষভাগে ব্যাট হাতে নেমে ভালো শুরুই করে বাংলাদেশ। সর্তকতার সাথে খেলে ভালোভাবে দিন শেষ করার লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের। নিজেদের লক্ষ্য পূরণের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম ও ইমরুল। কারন জুটিতে অর্ধশতকও পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু দলীয় ৫২ রানে স্কয়ার লেগে শ্রীলঙ্কার ফিল্ডার থাকা সত্বেও অহেতুক সুইপ শট মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে নিজের ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটান ইমরুল। ৪৮ বলে ১৯ রান করেন তিনি। এরপর উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিমও। ৬টি চারে ৬২ বলে ৪১ রান করে ফিরেন তামিম। তার বিদায়ের ৫ রান পর সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকেও হারায় বাংলাদেশ। তাই দিন শেষে ৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ। মুশি ২ রানে ফিরলেও, অন্যপ্রান্তে ১৮ রানে অপরাজিত প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রান করা মোমিনুল। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ১টি করে উইকেট নেন হেরাথ-পেরেরা-সান্দাকান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫১৩
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৯৯.৩ ওভারে ৭১৩/৯ (ডি.) (আগের দিন ৫০৪/৩)( রোশেন ১০৯, চান্দিমাল ৮৭, ডিকভেলা ৬২, পেরেরা ৩২, হেরাথ ২৪, লাকমল ৯, কুমারা ২*; মুস্তাফিজ ১/১১৩, সানজামুল ১/১৫৩, মিরাজ ৩/১৭৪, তাইজুল ৪/২১৯, মোসাদ্দেক ০/২৪, মুমিনুল ০/৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৬.৫ ওভারে ৮১/৩ (তামিম ৪১, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ১৮*, মুশফিক ২; হেরাথ ১/২২, লাকমল ০/১৬, ধনঞ্জয়া ০/২০, পেরেরা ১/২০, সান্দাকান ১/৩)।
বিডি প্রতিদিন/০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এনায়েত করিম