রবিবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হয়েছে ১৭তম ব্রিকস সম্মেলন, যেখানে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা একত্রিত হয়েছেন। তবে এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশগুলোর অন্যতম চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি সবার নজর কেড়েছে। ২০১২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম জিনপিং ব্রিকস সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকলেন। বেইজিং তার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে সময়সূচির সংঘাতকে উল্লেখ করলেও এর পেছনে গভীর কোনো কারণ রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ব্রিকস (যার সংক্ষিপ্ত রূপটি এর প্রাথমিক সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে গঠিত) পশ্চিমা আধিপত্য নিয়ে সদস্য দেশগুলোর উদ্বেগের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করছে। ২০২৪ সাল থেকে ব্রিকসে মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ইরান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা এর সম্প্রসারণকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে মার্কিন শুল্ক নিয়ে আলোচনার সময়সীমার মুখোমুখি হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির তীব্র নিন্দা জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারা এই নীতিগুলোকে অবৈধ এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বলে অভিহিত করছেন। এই পরিস্থিতিতে শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থিতিশীল বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার ইঙ্গিত দেয়, যা বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে গ্লোবাল সাউথের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিল।
বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও রিও ডি জেনিরোতে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হননি। তবে তিনি ২০২৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস সম্মেলনের মতো এবারও ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যোগ দেবেন। পুতিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখোমুখি। ব্রাজিল আইসিসি সনদের একটি স্বাক্ষরকারী দেশ। আইসিসি রুশ নেতার বিরুদ্ধে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় শিশুকে অপহরণ ও নির্বাসনে সহায়তার অভিযোগ এনেছে। গত বছর মঙ্গোলিয়ায় পুতিনের সফরের সময় আইসিসি পরোয়ানায় পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য আইসিসির সঙ্গে আইনি বিবাদে জড়িয়েছিল। পুতিন সম্ভবত আয়োজকদের বিব্রত করা এড়াতেই ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে বিরত থাকছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, এই দুই বিশ্ব হেভিওয়েটের অনুপস্থিতির পেছনে আরও গভীর কারণ থাকতে পারে। দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এটি এই গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সম্প্রসারণের ফলে দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের কাছে এর আদর্শিক মূল্য কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। ব্রিকসকে প্রায়শই জি-৭ দেশগুলোর বিকল্প হিসেবে দেখা হয়, যা পশ্চিমা পুঁজিবাদের আদর্শিক বিকল্প হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে ব্রিকস তার সংহতি এবং আদর্শিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের সহযোগী অধ্যাপক চং জা ইয়ান সিএনএনকে বলেছেন, শি জিনপিংয়ের জন্য ব্রিকস হয়তো তার সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার নয়, কারণ তিনি চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করছেন। তিনি আরও জানান, বেইজিংয়ের এই বছরের সম্মেলনে বড় ধরনের কোনো সাফল্যের প্রত্যাশা কম থাকতে পারে।
চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতের মুখে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জিনপিংয়ের অনুপস্থিতির আরেকটি কারণ হতে পারে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ক্রমবর্ধমান মনোযোগ। সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের প্রেসিডেন্ট এই বছর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশের আগে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে ব্যস্ত থাকতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল