রংপুরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত এক মাসে অপচিকিৎসায় চার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে সচেতন মহলের ধারণা, অনেক মৃত্যুর বিষয়ে স্বজনরা অভিযোগ করেন না আইনি জটিলতার কারণে। ফলে সেই হিসাব সরকারি নথিতে ওঠে না। জেলা সিভিল সার্জন অফিস অভিযান চালিয়ে অপচিকিৎসা এবং অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে পারছে না।
রংপুর বিভাগের দেড়কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সরকারি হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী থাকায় অনেকে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এই সুযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আশপাশ এালাকায় ২০০-এর বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। হাতেগোনা দু-চারটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ভালো থাকলেও বাকি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
গত জুন মাসে অপচিকিৎসায় তিন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে সিভিল সার্জন ওইসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে জরিমানাসহ সিলগালা করে দিয়েছেন। ৩ জুলাই এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযান চালিয়ে দুটি বেসরকারি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্লিনিক দুটির কর্তৃপক্ষকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিষ্ঠান দুটি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সেখানে ছিল না প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল। নোংরা ও অনিরাপদ পরিবেশে চালু ছিল অপারেশন থিয়েটার। এসব অনিয়মের দায়ে বাংলাদেশ হাসপাতাল ও রেইনবো ক্লিনিককে ২ লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সিলগালা করা হয় উভয় ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসে উত্তরা, নিউ রংপুর, রেনেসাঁ, ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে স্বপ্ন, রেনেসাঁ ও ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে অভিযান চালানো হয়। এপ্রিলে র্যাডিসান, মার্চে আবদুল্লাহ ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়।
মহানগর সুজনের সভাপতি ফখরুল আলম বেঞ্জু বলেন, অপচিকিৎসায় মারা যাওয়া যেসব রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন তাদের বিষয়টি শুধু প্রকাশ পায়। অনেক রোগীর স্বজন আইনি জটিলতা ও ভয়ভীতির কারণে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারেন না। তাদের বিষয়টি সামনে এলে রংপুরের স্বাস্থ্য সেবার ভয়াবহ চিত্র উঠে আসত।
রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, অব্যবস্থাপনা ও অপচিকিৎসা রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অপচিকিৎসা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।