মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত পেশাজীবীদের জন্য তাদের আবাসন কর্মসূচির শর্ত শিথিল করে নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এই নতুন কর্মসূচিটি মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছে। এর ফলে, এতদিন যেখানে গোল্ডেন ভিসা পেতে বিশাল বিনিয়োগ বা সম্পদের প্রয়োজন হতো, সেখানে এখন বিভিন্ন পেশার মেধাবী ব্যক্তিরাও এই সুযোগ পাবেন।
কোন পেশাজীবীরা পাচ্ছেন এই সুযোগ?
নতুন এই গোল্ডেন ভিসা কর্মসূচিতে নার্স, শিক্ষক, এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে, কেবল উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বিশেষজ্ঞদের জন্য এই সীমিত সুযোগ ছিল। তবে এখন বিজ্ঞানী, কর্পোরেট নির্বাহী, ফ্রন্টলাইন কর্মী, স্কুলশিক্ষক, অধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞ নার্সরাও এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পেশাজীবীদের জন্যও খুলেছে নতুন দিগন্ত। ইউটিউবার, পডকাস্টার, ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা, ২৫ বছরের বেশি বয়সী ই-স্পোর্টস পেশাজীবী, বিলাসবহুল ইয়টের মালিক এবং মেরিটাইম নির্বাহীরাও এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর সুবিধা, বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বিশ্বজুড়ে অনেকেই সেখানে বসবাস করতে আগ্রহী। এই উদ্যোগের ফলে আরও বেশি সংখ্যক পেশাজীবী সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গোল্ডেন ভিসার ইতিহাস ও বর্তমান পরিবর্তন
২০১৯ সালে আমিরাত সরকার বিশ্বের সম্পদশালী ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে গোল্ডেন ভিসা কর্মসূচি চালু করে। শুরুতে রিয়েল এস্টেট খাতে বিপুল বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধা পেতেন। পরে ২০২২ সালে ১০ বছরের ভিসার জন্য বিনিয়োগের ন্যূনতম সীমা কমিয়ে ২০ লাখ আমিরাতি দিরহাম (প্রায় ৬৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা) নির্ধারণ করা হয়, যা আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। এখন এই শর্ত আরও শিথিল হওয়ায় পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি দারুণ খবর।
আবেদন প্রক্রিয়া ও খরচ
নতুন ‘মনোনয়ন-ভিত্তিক ভিসা নীতিমালার’ আওতায় ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকরা আজীবনের জন্য গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ভিসার জন্য ১ লাখ দিরহাম (প্রায় ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা) ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের জন্য এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। মনোনয়ন-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার প্রথম ধাপের এই কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আমিরাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রায়াদ গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়াদ কামাল আইয়ুব বলেছেন, এটি বাংলাদেশ ও ভারতীয়দের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।
বাছাই প্রক্রিয়া: স্বচ্ছতা ও নিরীক্ষা
রায়াদ কামাল আইয়ুব জানান, গোল্ডেন ভিসার আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে। এতে অর্থপাচার, অপরাধমূলক রেকর্ডের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়াও, আবেদনকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার ও ব্যবসায়িক পরিবেশে কীভাবে অবদান রাখতে পারেন, তা যাচাইয়ের জন্য সংস্কৃতি, অর্থ, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, স্টার্ট-আপসহ পেশাগত সেবার মতো বিভিন্ন দিকও বিবেচনা করা হবে। সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর আমিরাত সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আবেদনকারীকে নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। একবার অনুমোদন পেলে আবেদনকারীর দুবাইয়ে যাওয়ার দরকার হবে না। রায়াদ কামাল আইয়ুব বলেন, ভারত ও বাংলাদেশে ওয়ান ভাস্কো সেন্টারের মাধ্যমে মনোনয়ন-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। এছাড়াও আমাদের নিবন্ধিত অফিস, অনলাইন পোর্টাল কিংবা কল সেন্টারের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে।
এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ চুক্তিতে (সিইপিএ) স্বাক্ষরকারী-অংশীদার দেশগুলোর একটি সমঝোতা। ভারত ও বাংলাদেশ দিয়ে শুরু হওয়া এই পাইলট প্রকল্পে ভবিষ্যতে চীনসহ অন্যান্য দেশও যুক্ত হবে।
নতুন গোল্ডেন ভিসার সুবিধা: স্থায়ীত্ব ও পরিবারের সুযোগ
গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার পর মনোনীতরা পরিবারের সদস্যদের দুবাইয়ে নিতে পারবেন। রায়াদ কামাল আইয়ুবের মতে, এই ভিসার ভিত্তিতে গৃহকর্মী ও চালকও রাখা যাবে এবং যেকোনো ধরনের ব্যবসা কিংবা পেশাগত কাজও করা যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সম্পত্তি বিক্রি অথবা ভাগাভাগির ফলে সম্পত্তি-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসা বাতিল হলেও মনোনয়ন-ভিত্তিক ভিসা স্থায়ী থাকবে।
সূত্র: খালিজ টাইমস
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল