ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত দিনাজপুরের বিরলের জিয়াউর রহমানের (৪৩) মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করতে দেননি স্ত্রী শাহানাজ আক্তার।
ফলে জিয়াউর রহমানের মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে গেছেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাদ্দাম হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার সকালে ঢাকায় নিহত জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউপি’র নাগরবাড়ী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর কবর থেকে মৃতদেহ উত্তোলন করার জন্য আসেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিমনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহ. সাদ্দাম হোসেন, বিরল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আনিছুর রহমান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা ডিএমপি’র উত্তরা পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মহাসিন হাসান প্রমুখ।
এসময় নিহত জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও মামলার বাদী শাহানাজ আক্তার নিহত জিয়াউর রহমানের লাশ কবর থেকে উত্তোলনে আপত্তি জানান।
মামলার বাদী শাহানাজ আক্তার জানান, তিনি তো (জিয়াউর রহমান) মরেই গেছেন। আমিসহ আমার ছেলে-মেয়ে কেউ মৃত জিয়াউর রহমানের লাশ উত্তোলন করতে দিতে ইচ্ছুক নই। প্রয়োজনে আমি বিজ্ঞ আদালতে এই ব্যাপারে আবেদন করবো।
এব্যপারে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি ও আদেশে ভিকটিম জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করতে এসেছি। তবে ভিকটিমের স্ত্রী মামলার বাদী শাহানাজ আক্তারের আপত্তির কারণে মৃতদেহ উত্তোলন না করেই ফেরত যাচ্ছি। আমি এবিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতিবেদন দিব। এরপর বিজ্ঞ আদালত যেটা সিদ্ধান্ত দিবেন সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নিহত জিয়াউর রহমান (৪৩) বিরল উপজেলার নাগরবাড়ী গ্রামের মৃতঃ আব্দুল কাফি ও খালেদা দম্পত্তির ছেলে। কাজের কারণে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে হোল্ডিং নং-২-এ/১-৭, সেকশন-২, ব্লক-এ-তে বসবাস করতেন। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অমির কমপ্লেক্সের উত্তর পাশে পাকা রাস্তার উপর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় দূর্বৃত্তদের গুলিতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন ভিকটিম জিয়াউর রহমান। তাকে চিকিৎসার জন্য উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় জিয়াউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জিয়াউর রহমানের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করলে লাশের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত ছাড়াই তার গ্রামের বাড়ী নাগবাড়ী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এঘটনায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মোছাঃ শাহানাজ আক্তারের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ মোতাবেক উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা ডিএমপি’র উত্তরা পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মহাসিন হাসান মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ভিকটিমের মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতি এবং আদেশ চেয়ে একটি আবেদন করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে জিয়াউর রহমানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রস্তুত এবং ময়না তদন্তের আদেশ দেন ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল