সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এখন কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে চলচ্চিত্র মুক্তিতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ খোদ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দিন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একটি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সরকারের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। স্বাধীনতার আগ থেকে স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এখনো এ দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের অধীনেই রয়েছে। যেমন- কোনো সিনেমা হলে কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টা আগে সেন্সর সার্টিফিকেটসহ প্রেক্ষাগৃহ মালিককে তা স্থানীয় জেলা বা উপজেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- গত প্রায় এক দশক ধরে এ নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই। কেউ অনুমোদন নেওয়ার ধার ধারে না। যে কারণে এখন আনসেন্সরকৃত চলচ্চিত্র অবাধে প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে অশ্লীল চলচ্চিত্র দেখে যুবসমাজ বিপথে যাচ্ছে। আগে নিয়মিতভাবে প্রেক্ষাগৃহ পরিদর্শনে যেতেন সেন্সর বোর্ডের কর্মকর্তারা, তাদের কাজ ছিল যথাযথভাবে সেন্সরকৃত চলচ্চিত্র প্রদর্শন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা। বর্তমানে এ প্রথাও চালু নেই বলে জানান মিয়া আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহের টিকিটের হার কত তাও অবহিত করতে হয় স্থানীয় জেলা প্রশাসককে। কিন্তু বর্তমানে এ ব্যবস্থা কেউ না মানায় এটি অব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। এতে খেয়ালখুশি মতো টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করার ফলে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহবিমুখ হচ্ছে।
এ ছাড়া পুরোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আনসেন্সরকৃত অশ্লীল পোস্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান মিয়া আলাউদ্দিন। এখন সিনেমার ট্রেলার প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন নেওয়ার তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। ফলে দর্শক আকর্ষণ করতে ভায়োলেন্স এবং যৌন দৃশ্যসংবলিত ট্রেলার রুচিসম্মত দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আগে চলচ্চিত্রের পোস্টার সেন্সর বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ করা হতো, এখন তা-ও হয় না। ফলে নিয়মনীতিবিহীন অরুচিকর পোস্টারে বিব্রত হচ্ছে রুচিশীল মানুষ। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, প্রত্যেক জেলায় এসব তদারকি করার জন্য তথ্য অফিস রয়েছে। কিন্তু কেউ-ই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলে বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে- ‘সিনেমা হল আসলে কার নিয়ন্ত্রণে চলছে।’