যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মারাত্মকভাবে বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএসই (ফরাসি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা)। সংস্থার প্রধান নিকোলাস লারনর জানান, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্রে পরমাণু বসানো পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল এলসিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম এখন ‘অনেক পিছিয়ে গেছে’ এবং এই ধাক্কার প্রভাব কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এই মূল্যায়ন এমন সময় এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, গত মাসের বিমান হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” হয়ে গেছে। তবে মার্কিন প্রশাসনের মধ্য থেকেই কিছু ভিন্নমত উঠে এসেছে, যেগুলো ট্রাম্প খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন।
প্রথমে একটি গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ইরানের কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য থমকে গেছে। পরে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলার ফলে ইরানের কার্যক্রম অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
ফরাসি গোয়েন্দা প্রধান লারনর বলেন, হামলার পরপরই কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে পুরো পরিস্থিতির নিখুঁত বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সতর্ক থাকা জরুরি।
তিনি আরও জানান, ইরানের ৪৫০ কেজির বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগ অংশ এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও এর একটি ছোট অংশ ধ্বংস হতে পারে, তবুও মূল মজুত অক্ষত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই ইউরেনিয়াম খুব বেশি সমৃদ্ধ, যা অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহারযোগ্য।
লারনর সতর্ক করে বলেন, এখন ইরান গোপনে আবার নতুনভাবে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সবারই সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না। তবে সাম্প্রতিক হামলার পর দেশটি জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে। এতে করে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য দেশটির কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এতটুকু পরিষ্কার যে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্যও গুরুত্ব বহন করছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল