শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশে দেশে নান্দনিক মসজিদ

তানভীর আহমেদ

দেশে দেশে নান্দনিক মসজিদ

আফ্রিকার দেশ মালি। এখানে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ। ধারণা করা হয় এটি ১২০০ অথবা ১৩০০ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, সুলতান কুনবুরু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নিজের প্রাসাদ ভেঙে সেখানে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের অবকাঠামোতে মাটি ও তাল কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। বানি নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদটি ২৪৫ বাই ২৪৫ আয়তনবিশিষ্ট ৩ ফুট উঁচু প্লাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

ইতিহাস জড়ানো

 

মসজিদ আল হারাম

মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান ‘কাবা’কে ঘিরে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত মসজিদ আল হারাম। মহান আল্লাহর হুকুমে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবা ঘর ও তত্সংলগ্ন এই মসজিদ নির্মাণ করেন। কাবা ঘরের দিকে মুখ করে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে নামাজ আদায় করা হয়। ৮৮.২ একর বা ৩,৫৬,৮০০ বর্গমিটার জমির ওপর মসজিদটি বিস্তৃত। এই মসজিদে প্রায় ৯ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে হজের সময় সে সংখ্যা বেড়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মসজিদটি পবিত্র কাবা ঘরের চতুর্বেষ্টিত।

 

কুবা মসজিদ

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনা অভিমুখে সর্ব প্রথম যে মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন, তার নাম কুবা মসজিদ। এখানে তিনি সর্ব প্রথম নামাজ আদায় করেন। বর্তমানে কুবা মসজিদ চত্বরে মূল মসজিদ ছাড়াও আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে। মসজিদের মূল আকর্ষণ ছয়টি বিশাল গম্বুজ এবং চার কোনায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদে মহিলাদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। চারদিকে সবুজ পাম গাছের সারি মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য প্রদান করেছে। ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনর্নির্মাণকালে ব্যাপকভাবে সাদা ব্যাসল্ট পাথর ব্যবহার করা হয়।

 

বিস্ময় জাগানো স্থাপত্যশৈলী

 

মসজিদের শহর ঢাকা

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ জরিপ ২০০৮ অনুযায়ী ঢাকা শহরের মসজিদের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৭৬টি। ঢাকার প্রথম মসজিদ বিনত বিবির মসজিদ। এ ছাড়া রয়েছে মুসা খাঁর মসজিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের উত্তর-পশ্চিম   কোণে মুসা খাঁর তৈরি এ মসজিদ। মুঘল স্থাপত্যশিল্পের ঐতিহ্যকে ধারণ করে পুরান ঢাকায় নির্মাণ করা হয় তারা মসজিদ। আরও রয়েছে খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, মাণ্ডা মসজিদ, হায়াত বেপারি জামে মসজিদ, মসজিদে মুফতি-এ আজম, চুড়িহাট্টা মসজিদ, বেগমবাজার মসজিদ, সাত গম্বুজ মসজিদ, হাজী খাজা শাহবাজ মসজিদ ইত্যাদি।

 

সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ

গ্রান্ড মসজিদ। মসজিদটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ এটি। পশ্চিম আফ্রিকার  দেশ মালির ডিজেনি শহরে এর অবস্থান। নির্মাণকাল সম্পর্কে ঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও ১২০০ শতাব্দী থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মিত হয়েছে বলে অধিকাংশ গবেষক দাবি করেন। তবে বর্তমানে যে কাঠামোটি দেখা যায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯০৭ সালে। আর ইউনেস্কো মসজিদসহ এর চারপাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৮ সালে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন।

 

স্থাপত্যের চমক

মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া। আধুনিক যুগের স্থাপত্যের চমক পুত্রা মসজিদ। ১৯৯৭ সালে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই মসজিদটি আধুনিক যুগে নির্মিত নান্দনিক মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। গোলাপি রঙে রাঙানো পুরো মসজিদ। এখানে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। কৃত্রিম পুত্রাজায়া লেকের প্রান্তে মসজিদটি এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যে দেখে মনে হয় এটি জলে ভাসছে। এই মসজিদের গম্বুজ সংখ্যা ৯। স্থাপত্যশৈলীতে ইসলামিক, মামলুক ও আধুনিক স্থাপত্যের মিশ্রণ রয়েছে।

 

ভারতের বৃহত্তম মসজিদ

দিল্লির জামা মসজিদ বিশ্বজুড়ে নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদগুলোর একটি। ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে নির্মিত স্থাপত্যের একটি সেরা নিদর্শন জামা মসজিদ। মসজিদের ফাটলে এবং তার সিঁড়ি ও গম্বুজের উপরে শত শত পায়রার বসতি স্থাপন করার দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। জামা মসজিদে একসঙ্গে ২৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। দিনে  মসজিদের সমৃদ্ধ স্থাপত্য নকশা অধ্যয়নের জন্য খোলা থাকে।

মসজিদটির নির্মাণ কাজ ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় এবং ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। মসজিদটির প্রাঙ্গণের তিনদিক থেকে উন্মুক্ত দ্বার রয়েছে। পূর্বীয় দ্বারটিকে রাজকীয় দ্বার বলা হয়। সম্রাট এবং তার পরিবার পূর্বদিকের দ্বার দিয়ে ঢুকতেন যেটিতে ৩৫টি ধাপ রয়েছে। উচ্চবংশীয় বা উচ্চপদস্থরা উত্তরীয় দ্বার দিয়ে প্রবেশ করতেন। সাধারণ মানুষেরা দক্ষিণী দ্বার দিয়ে প্রবেশ করতেন। পূর্ব দিকের দ্বারের ছাদটির ওপর মৌচাকের মতো খোদাই করা খিলান নির্মিত। এ ছাড়াও পূর্ব দিকের দ্বারটি বেশ কিছু সংখ্যক ছোট ছোট সুদৃশ্য গম্বুজ দ্বারা সুসজ্জিত করা। মসজিদের কেন্দ্রীয় ভবনটির প্রাঙ্গণ বেলে পাথরে নির্মিত। এর চারদিকে পিলারযুক্ত বারান্দাও আছে।

 

বাংলাদেশের নির্মাণাধীন সর্ববৃহৎ মসজিদ

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন-ব্লকে নির্মাণ করা হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মসজিদ ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.) জামে মসজিদ। নির্মাণাধীন এই মসজিদে এ বছর পয়লা রমজান থেকে খতমে তারাবি আদায় করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার থেকে মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই মসজিদে ৫০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদে ১২০ ফুট উঁচু মিনার তৈরি করা হবে। অত্যাধুনিক অজুখানা ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ মসজিদে ব্যবহার করা হবে উন্নতমানের টাইলস।

 

 

মহাসাগরে ভাসমান

এ মসজিদ যেন আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এক বিস্ময়। সাগরের বুকে ভ্রমণকারী যে কেউ হঠাৎ চমকে যাবেন মসজিদটি দেখলে। দূর থেকে মনে হয় সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে এই মসজিদ। সাগরে ভাসমান মসজিদটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক হাসান-২ বা দ্বিতীয় হাসান মসজিদ। মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় রয়েছে এটি। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিদটি তৈরি করেছেন। মসজিদটির তিন ভাগের এক ভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত। এ জন্য একে ভাসমান মসজিদও বলা হয়। মসজিদটির ভেতরে ২৫ হাজার এবং ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে একসঙ্গে লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে নামাজ আদায়ের আলাদা ব্যবস্থা। ঝড়-বৃষ্টির সময় ছাড়া তিন মিনিট পরপর প্রাকৃতিক আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবেশ করতে মসজিদটির ছাদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়।  আড়াই হাজার পিলারের ওপর স্থাপিত এ মসজিদের ভেতরের পুরোটাই টাইলস বসানো। মসজিদ এলাকার আশপাশ সাজানো হয়েছে ১২৪টি ঝরনা ও ৫০টি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি দিয়ে। মসজিদের কোথাও কোথাও স্বর্ণের পাত দিয়ে মোড়ানো হয়েছে।

 

চোখ জুড়ানো মসজিদ

 

>> সুলতান আহমেদ মসজিদ ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদের ভিতরের  দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত বলে এই মসজিদটি ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নামে পরিচিত। এটি ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উসমানীয় সম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি নির্মাণ করেন।

 

>> হাসানাল বলখিয়া মসজিদ। মসজিদটি সুলতান হাসানাল বলখিয়া মু’জাদিন ওয়াদ্দুলাহর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি ব্রুনাইয়ে অবস্থিত। দেশটির সুলতানের সিংহাসন আরোহণের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে ব্রুনাইবাসীর প্রতি সুলতানের উপহার ছিল। এখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

 

>> পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত শাহ ফয়সাল মসজিদ। এটি প্রায় ৫৪,০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আছে। এটি তৈরিতে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এই মসজিদ ও মসজিদ প্রাঙ্গণে সবমিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। পুরো মসজিদ এলাকার আয়তন ৪৭ একর।

 

>> সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থিত শেখ জায়েদ মসজিদ। এর চার কোনায় চারটি মিনার আছে। মসজিদে ৮২টি গম্বুজ, ১ হাজারের বেশি স্তম্ভ, ২৪ ক্যারেট সোনার ঝাড়বাতি ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতে তৈরি কার্পেট দিয়ে সাজানো। মসজিদটি পানির পুল দিয়ে ঘেরা যা মসজিদটির  সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর