নেত্রকোনাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী এখন ঘণ্টাব্যাপী জ্যাম। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইজিবাইক। হেঁটেও চলাচল করার উপায় নেই নগরবাসীর।
প্রতিটি গন্তব্যের দূরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট হলেও ঘণ্টা দুয়েক হাতে রাখতে হয় চলাচলকারীদের। কোন ফুটপাত ধরে হাঁটার সুযোগ নেই। রোগী নিয়ে আটকে থেকে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না স্বজনদের। অফিস আদালতসহ দৈনন্দিন চলাফেরায় এই ছোট্ট শহরেও আলাদা সময় গুণতে হয় পথচারীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় সড়কের ওপরেই।
পৌরসভা লাইসেন্স কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এই শহরে ইজিবাইক ২৪৩০ টি, মিশুক ১৩১১টি ও ব্যাটারি চালিত রিকশা ১৯০৩টি চলাচল করছে। চলতি অর্থ বছরে অন্যান্যগুলোর ৪টিসহ ২০ টি ইজিবাইকের লাইসেন্স বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শহর ঘুরে বাস্তবে দেখা যায় প্রতিদিন ইজিবাইক চলে ৮ থেকে ১০ হাজার। লাইসেন্সধারী ছাড়াও সাবেক মেয়রের সিন্ডিকেট বাহিনীর টোকেন দিয়েই চলা ইজিবাইক এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর।
পথচারী ডা. গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এক রাস্তার শহর নেত্রকোনা। মগড়ার পাড়ে ছিমছাম পরিবেশে শহরটি গড়ে উঠলেও এখন যেন বিরক্তি আর ভোগান্তির শহরে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা যখন তখন যত্রতত্র জ্যাম লেগে যায়। মানুষের হেঁটে চলাও মুশকিল
হয়ে পড়ে।
রোগী নিয়ে থানার মোড়ে এম্বুলেন্সে আটকে থাকা গোলাম আসকার বলেন, শহরে বৈধ-অবৈধ অটোরিকশায় সয়লাব। নেই কোন জবাবদিহিতা। নিয়ম কানুন মানেনা। সড়কের মাঝপথ ধরেই চলাচল তাদের। যেন ইজিবাইকের স্বর্গরাজ্য নেত্রকোনা শহর।
অটোরিকশা চালক এমদাদুল হক ও মিলন মিয়া বলেন, তারাও গাড়ি চালাতে পারেন না। ১০ থেকে ১৫ হাজার অবৈধ গাড়ি চলে। এখন যেন তাদের আর বাধাই নেই।
পৌর প্রশাসক স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মামুন খন্দকার জানান, বিগত কয়েকমাস ধরে জ্যাম প্রকট আকার ধারণ করেছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেশি। এরাই জটলা সৃষ্টি করে। সভায় আলোচনা হয়েছে অবৈধগুলোর ব্যাপারে পুলিশ সাথে নিয়ে অভিযান চালানো হবে। এছাড়াও লাইসেন্সধারীদের সতর্ক করা হবে। তারাও যদি আইন না মানে তাহলে লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করা হবে।
পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ জানান, পট পরিবর্তনের পরে এখন পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই শহরের তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা অতিরিক্ত। তারপরও রোস্টার করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মানছে না কেউই। টোকেন গাড়ির ব্যাপারেও নিয়ম মাফিক অভিযান চলছে। গত একসপ্তাহ ধরে অবৈধ চলাচল বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটক মামলা ও জরিমানার সংখ্যাও বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা