অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ‘সংখ্যালঘু ধারণার খোপে’ নিজেদের আবদ্ধ না রেখে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সংখ্যালঘু নয়, নাগরিক হিসেবে অধিকার চাইবেন। গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে এ আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ, মন্দিরের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মকর্তা এবং ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যদি টেনে টেনে নিয়ে আসেন যে, আমি অমুক, আমি তমুক। এটা আবার পুরনো খেলায় চলে গেলেন। আমাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা শিকার করবে। আপনারা বলুন যে, আপনারা মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ। আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন।’ তিনি বলেন, ‘অধিকার আদায়ে বিভক্তি নয়, আমরা এক মানুষ, এক অধিকার। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। আমাদের আইনের অধিকার দিতে হবে। আজকে যেটা বললেন যে, আইনের অধিকার পাই না, বিচার পাই না, এটাই হলো আসল জিনিস।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাক্সক্ষা, সেখানে আমরা বিবেচিত মুসলমান হিসেবে নয়, হিন্দু হিসেবে নয়, বৌদ্ধ হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক। সমস্ত সমস্যার গোড়া হলো- আমরা যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করেছি, সবকিছু পচে গেছে। এই কারণে এই গোলমালগুলো হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলোকে ঠিক করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে কে বিচার পাবে না বলেন? আমি কি দেখছি যে, এটা কোন ধর্মের, জাতের, কোন ধরনের? তা কী আইনে বলা আছে? আইন একটা। কার সাধ্য আছে বিভেদ করে। এটা হতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা পেলে আমরা বাক্স্বাধীনতা পাব। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।’ হিন্দু নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদেরকে একটু সাহায্য করুন। ধৈর্য ধরেন, যদি না পারি আমাদেরকে দোষ দেবেন।’ বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘গত ৫৩ বছর ধরে আমাদের ওপর যত অপরাধ হয়েছে, তার একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। এ বিচারহীনতা দূর হবে আশা করি। সাম্প্রতিক ঘটনাসহ অতীতের ঘটনা নিয়ে একটি কমিশন হবে, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল হবে। দুর্বৃত্তরা বিচারের আওতায় আসবে।’ বৈঠকের বিষয়ে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাঁর সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’