টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে মহাসড়ক ও রেললাইনে। এমন অবস্থায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওই দুই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। তীব্র পানির স্রোত আর বন্যার কারণে এসব জেলায় গতকাল প্রায় বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ।
রেলওয়ের বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, আকস্মিক বন্যায় সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় রেলপথ ডুবে গেছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সব আন্তনগর, কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফেনী ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে রেললাইন পানিতে ডুবে যাওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন ছাড়লেও সেগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। পরে দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলকারী আন্তনগরসহ সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছাড়ে। কিন্তু বন্যার কারণে ট্রেনগুলো গন্তব্যে যেতে পারেনি। ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে। বন্যার পানিতে কুমিল্লায় রেললাইন উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফেনী স্টেশনে বন্যার পানি জমে রয়েছে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, জামালপুর, সিলেট ও চাঁদপুরে প্রতিদিন ১১টি আন্তনগর এবং কক্সবাজার, নাজিরহাট, চাঁদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা সিলেটের একটি রেল সেতুতে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনেও পাহাড়ধস হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রেন চালানো খুবই বিপজ্জনক। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রেলের সম্পদ রক্ষায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ডুবে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ফলে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক এক প্রকার বন্ধ ছিল সকাল থেকে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনী ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কিছু অংশ ডুবে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কে যান চলাচল অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামমুখী লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণ। তবে বিকালে পানি কমলে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিএসআরএম গেট থেকে মামা ফকির আস্তানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে অনেককে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে। অন্যদিকে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া সড়কে স্টার্ট বন্ধ হয়ে আটকে পড়েছে অনেক গাড়ি। অনেক চালককে উল্টো লেনে চলাচল করতে দেখা গেছে।