‘শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনি রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে চাইছে? রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন? সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এটি একদিকে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিকেই নিশ্চিত করবে। অপরদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা বাড়বে। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিশ্বস্ত সঙ্গী হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ, আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। রোডম্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি হবে অবশ্যই গণ-আকাক্সক্ষাবিরোধী। বিএনপির শীর্ষনেতা বলেন, সরকার তাদের সব কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে, জনগণও সরকারের প্রতি তত বেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ জোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার আগে এই প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, দুর্ভোগ বর্তমানে মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। কারণ জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে আগেও বলেছি, আজও উল্লেখ করতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরা নিজেদের সফল দেখতে চায় কি না, তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে। তারেক রহমান বলেন, একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর সময় কম নয়। এই কথাটি গতকাল (শনিবার) একজন প্রতিবন্ধী ভাই উল্লেখ করেছেন তাঁর কিছু কথা বলতে গিয়ে। লাখো মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে দেশের জনগণ আজ অভূতপূর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্য কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিএনপি ইতিমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে শিশু-নারী-বৃদ্ধ অথবা দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।