বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এবিজি টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (ট্রেজারার) ময়নাল হোসেন চৌধুরী।
সভায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, জীবনধারা, পরিবারিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আন্তরিক আলোচনা করেন উপদেষ্টাবৃন্দ। তারা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও সাফল্যের পথচলা জানতে চান এবং নিজেরা কীভাবে জ্ঞান, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন তা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীরাও নিজেদের জীবনের চ্যালেঞ্জ ও অনুভূতির কথা তুলে ধরেন।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত আক্তার তামান্না জানান, চার সদস্যের পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। টিউশন করে নিজের ও পরিবারের খরচ বহন করতে হয়। বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনা, ল্যাব ক্লাসের ব্যস্ততা সামলে টিউশন করা ছিল কঠিন। শুভসংঘের বৃত্তি পাওয়ার পর টিউশন বাদ দিতে পেরেছেন, পড়াশোনায় সময় দিতে পারছেন এবং জীবন কিছুটা সহজ হয়েছে।
শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সিরা আহম্মেদ জানান, মেডিকেল ইমার্জেন্সির কারণে তাদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়। লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধে পরিবারে আর্থিক চাপ তৈরি হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তি পাওয়ার ফলে তার আর্থিক অনিশ্চয়তা অনেকটাই কমেছে।
তিনি বলেন, ‘শুভসংঘ এভাবেই যেন সবার পাশে থাকে।’
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া ইবনাথ লাকি জানান, ২০২২ সালে তার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করার পর কর্মক্ষমতা হারান। সংসারের ব্যয় সামলাতেন বড় ভাই। তবে ভাইয়ের বিয়ের পর ভাবি থ্যালাসেমিয়া মাইনর পজিটিভ জানা গেলে পারিবারিক ব্যয় আরও বেড়ে যায়। ফলে পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তি পাওয়ার পর তিনি আবারও স্বস্তিতে পড়াশোনা করতে পারছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষা বৃত্তি তাদের জীবনের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন,‘সংগ্রাম ছাড়া মানুষের জীবন হয় না। তোমরা সংগ্রাম করেই আজ এখানে পৌঁছেছো। আমরা চাই তোমরা উচ্চ শিক্ষিত, নৈতিক ও মানবিক মানুষ হও। যাতে একদিন গর্ব করে বলতে পারি শুভসংঘের বৃত্তি পেয়ে তোমরা ভালো জায়গায় দাঁড়িয়েছো।’
বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (ট্রেজারার) ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন,‘তোমাদের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তোমাদের এই পর্যায়ে এনেছেন। তাদের মুখ উজ্জ্বল করো। বসুন্ধরা শুভসংঘ সবসময় তোমাদের পাশে আছে।’
বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন,‘মেধাবী কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোই শুভসংঘের লক্ষ্য। আমরা চাই এই মেয়েরা ভবিষ্যতে নিজ আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুক।’
শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানায় এই সহযোগিতা তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনা ও স্থিতি এনে দিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ গড়তে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক