স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে, তা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার সাত দেশে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস) সুবিধা অব্যাহত রাখতে জোর তদবির চালাচ্ছে সরকার। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় এ বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে যে দেশগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে- সেগুলো হলো : ভারত, চীন, জাপান, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে শুধু জাপান জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। জানা গেছে, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। এর বাইরে সাফটার আওতায় কিছু পণ্য বাদে ভারত এবং বাজার সুবিধার আওতায় চীন বাংলাদেশকে ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে। ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের কথা রয়েছে। উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ পরবর্তী তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের আইনকানুনে পরিবর্তন আনেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তালিকাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রতি জাপান ঘোষণা দিয়েছে, দেশটি সব স্বল্পোন্নত দেশকেই (এলডিসি) ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা বা জিএসপি দেবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশও এ সুবিধা পাবে। এর বাইরে অন্য দেশগুলো থেকে এখনো কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারতের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে বাণিজ্য আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেশটি শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা চলছে। ওই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাপ্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে চীনের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাফটার আর্টিকেল ১১ অনুযায়ী এলডিসি উত্তরণের পরও মালদ্বীপ বাজার সুবিধা পেয়েছে। সেই একই নীতিতে বাংলাদেশও ভারতে শুল্ক সুবিধা চাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল; বিষয়টি নিয়ে সার্ক মিটিংয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনাও করা যেত; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সার্ক এখন কার্যকর নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটি যেন শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখে সে প্রচেষ্টাও চালানো হচ্ছে। ইপিএ নিয়ে এরই মধ্যে দেশটির সঙ্গে গত আগস্টে প্রথম দফা আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। সে সময় শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তোলা হবে। এই সাত দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতেও জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার সুযোগ চাইছে বাংলাদেশ। তবে অস্ট্রেলিয়া জিএসপি অব্যাহত রাখবে কি না সেটি চূড়ান্ত করবে সে দেশের পার্লামেন্ট। সে কারণে এ ক্ষেত্রে সরকারের নেগোসিয়েশন খুব বেশি ভূমিকা রাখছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ডব্লিউটিওর জেনারেল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলডিসি বিবেচনায় যে দেশগুলোতে বাজার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, উত্তরণের পরও সেই দেশগুলো ওই সুবিধা অব্যাহত রাখবে কি না সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে চীন, জাপান, ভারতসহ সাতটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করছে। সম্প্রতি একটি দেশ (জাপান) পরবর্তী তিন বছরের জন্য সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্য দেশগুলোতেও একই সুবিধা পাওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।