শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। বর্তমানে সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনো চড়া। ক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের সবজি আসায় আশা করেছিলাম দাম কমবে। দাম কিছুটা কমলেও তা আশানুরূপ নয়। বেড়েছে পিঁয়াজের ঝাঁজ। প্রায় এক মাসের মধ্যে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ১২০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সবজির সরবরাহ গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। বাজারে এখন লাউ, বেগুন, টম্যাটো, শিম, শসা, কুমড়া, করলা, বরবটি, পুঁইশাকসহ প্রায় সব ধরনের সবজির প্রাচুর্য; তবুও দাম কমেনি বরং স্থিতিশীলভাবেই চড়া রয়েছে। পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ থেকে উৎপাদন ভালো আসায় ট্রাকে করে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ সবজি ঢুকছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে। কিন্তু বাজারে ‘অঘোষিত সিন্ডিকেট’ দাম কমতে দিচ্ছে না। ফলে খুচরা বাজারে আসার পর সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি। কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আগের তুলনায় অনেক বেশি পণ্য পাচ্ছি। কিন্তু ট্রাকভাড়া, শ্রম খরচ সব মিলিয়ে পাইকারি দাম কমানো যাচ্ছে না। তবে দাম যে একেবারে কমে নাই তা বলা যাবে না। খুচরা বিক্রেতারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। তবে আশা করা যায় সপ্তাহ খানেক পর দাম পড়ে যাবে। যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, টম্যাটো ৯০-১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০-১৫০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, লাউ ৭০-৮০ টাকা (একটি), পুঁইশাক ৩০-৩৫ টাকা, লালশাক, মুলাশাক প্রতিমুঠো ৩০ টাকা, লাউশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীতে বাজার করতে আসা রহিমা বেগম বলেন, ‘বাজারে সবজির পাহাড়, সস্তা হওয়ার কথা। কিন্তু দাম শুনলে মাথা ঘুরে যায়। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’ ক্রেতাদের অভিযোগ সরবরাহ যখন বেড়েছে এবং পরিবেশ অনুকূল, তখন দাম কমা স্বাভাবিক। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে দাম উঁচুতে ধরে রাখছে। একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের মানুষ কষ্টে আছে, কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে। সরকার নজরদারি বাড়ালেই দাম কমবে। বিক্রেতারা দাবি করছেন, তারা মুনাফা বেশি করছেন না; বরং পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের হাতে কিছু নেই। পাইকারি বাজারে রাতারাতি ১০-১৫ টাকা বাড়ালে আমরা কম দামে বিক্রি করব কীভাবে?
রাজধানীর মিরপুর ১১ ও ১২ এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে সাশ্রয়ী হিসেবে রয়েছে ব্রয়লার মুরগি ও চাষের তেলাপিয়া দুটোরই দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা। তবে অন্যান্য সব ধরনের মাছ ও মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। সোনালি মুরগি কেজিতে ৩২০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে চাষের পাঙাশ ২২০ টাকা হলেও নদীর পাঙাশ ৩৫০ টাকা। চাষের রুই ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং নদীর বড় রুই ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতলের দাম ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ১২০০ টাকা, ইলিশ ১৯০০ থেকে ২২০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০৫০ টাকা, কালো চান্দা ৭০০ টাকা, চিতল ৫৫০ টাকা, বড় শোল ৭৫০ টাকা, মাগুর ৭০০ টাকা, বাটা ৫৫০ টাকা এবং দেশি টেংরা ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজারেও ক্রেতাদের জন্য তেমন স্বস্তির খবর নেই। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা শীতের আগের দামের তুলনায় কিছুটা বেশি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজি ছাড়া প্রায় সব পণ্যের দামই এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই এবং মাংস কিনতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।