মিরপুর টেস্টের পুরো ফোকাস মুশফিকুর রহিমের ওপর। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলেছেন ৩৮ বছর বয়সি মুশফিক। টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের পুরোটা জুড়েই ছিল শুধু মুশফিক বন্দনা। প্রথম দিন ১০০ টেস্ট খেলার অভিজাত ক্লাবে নাম লেখেন সাবেক অধিনায়ক। দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি করে শততম টেস্টে সেঞ্চুরির ক্লাবে নাম লেখেন মুশফিক। গতকাল তৃতীয় দিনও মুশফিকের দিকেই ফোকাস ছিল। ক্যাচ কিংবা রানআউট করেননি, তারপরও ফিল্ডিং করলেই মাঠে উপস্থিত ২-৩ হাজার দর্শক উচ্ছ্বসিত হন। মুশফিকের টেস্টের তৃতীয় দিন আরও দুটি বিষয় ফোকাস টেনেছে। ভূমিকম্প ও তাইজুল ইসলাম। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে দেশজুড়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। বাদ যায়নি মিরপুর স্টেডিয়ামও। নিরাপত্তাজনিত কারণে খেলা কিছু সময় বন্ধ রাখেন আম্পায়ারদ্বয়। টেস্টের তৃতীয় দিন পারফরম্যান্স করে সব আলো টেনে নেন তাইজুল।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৭৬ রানের জবাবে আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে যায় ২৬৫ রানে। আইরিশদের গুটিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল। সফরকারীদের ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে তাইজুল এখন সাকিব আল হাসানের পাশে নাম লিখেছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের উইকেট ৭১ টেস্টে ২৪৬টি। তাইজুলের উইকেট ৫৭ টেস্টে ২৪৬টি। চলতি টেস্টে দুটি হাতছানি রয়েছে তাইজুলের। সাকিবকে টপকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার এবং দ্বিতীয়টি দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার। এজন্য অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট পেতে হবে তাইজুলকে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের একমাত্র স্পেশালিস্ট বোলার তাইজুল। ১১ বছরের ক্যারিয়ার শুরু ২০১৪ সালে, সেপ্টেম্বরে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর আর কখনো পেছন ফিরে তাকাননি। ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক থাকলেও এখন শুধু টেস্ট খেলেন। এখন যুগ্মভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। চলতি টেস্টে হয়তো টপকে যাবেন সাকিবকে। এককভাবে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবেন। পোস্ট ম্যাচ কনফারেন্সে তাইজুল স্বীকার করেন ক্যারিয়ারের শুরুতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবেন, এটা ভাবেননি ‘না। আসলে প্রত্যেকটা প্লেয়ারের প্রথম লক্ষ্য থাকে যে, আমি জাতীয় দলে খেলব। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার পরেও আমি কতদূর যাব, হয়তো বা অনেকজনের লক্ষ্য থাকে। আমার এ রকম
কোনো লক্ষ্য ছিল না যে, এইখানে থামব, শেষ করব। চেষ্টা করব, আমার ক্যারিয়ার কতদূর যায় সেটা দেখা।’
সাকিবের সঙ্গে বোলিং করেছেন। কখনো কখনো পারফরম্যান্সে সাকিবকে পেছনে ফেলেছেন। সাকিব এখন নেই। তাই দলের বাড়তি দায়িত্ব তাকেই নিতে হচ্ছে। সাকিব না থাকায় বোলিংয়ের মূল ফোকাস তার দিকে থাকে। যদিও তাইজুল এটা স্বীকার করছেন না। তিনি বলেছেন সাকিব সব সময়ই তাকে সহযোগিতা করেছেন, ‘আপনি যখন দলে খেলবেন, তখন আপনাকে পারফরম্যান্স করতে হবে। সাকিব ভাই বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি সব সময় দেশকে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা যারা তার সঙ্গে খেলেছি, তারা তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। উনি আমাদের সব সময় উপদেশ দিতেন, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি।’ বয়স ৩৪ ছুঁই ছুঁই। পারফরম্যান্স ও ফিটনেস ধরে রাখলে ভবিষ্যতে আরও ৪-৫ বছর খেলতে পারবেন তাইজুল। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হয়তো ২৫০ উইকেট শিকারি হয়ে যাবেন। ক্যারিয়ার শেষে নামের পাশে কত উইকেট দেখতে চান, এমন উত্তরে তাইজুল হেসে বলেন, ‘এমন কোনো টার্গেট নেই। আল্লাহ যদি আমাকে ৭০০ উইকেট দেন, তাহলে ৭০০টা নিতে রাজি আছি।’
খেলা তখন চলছিল ৫৫.৩ ওভারের। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। তখন ভূমিকম্প হয়। আম্পায়ারদ্বয় আতঙ্ক এড়াতে খেলা বন্ধ রাখেন ৩ মিনিট। ভূমিকম্পের বিষয়ে তাইজুল বলেন, ‘আসলে প্রথমে বুঝিনি। একটা সময় সম্ভবত মিডিয়া বক্স যে জায়গায়, সেদিক থেকে একটা আওয়াজ আসছিল। ওই একটা শব্দ এসেছে। তারপরে শারীরিকভাবেও অনুভব করেছি।